ছন্নছাড়া কাশ্মীরে আজ শুধুই নীরবতা

সেই রুদ্ররূপ আর নেই। ঝিলম আজ অনেকটাই শান্ত। লালচক ও হরি সিংহ হাইস্ট্রিট সংযোগকারী আমিরা কদল সেতুর উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এ কথাই বলাবলি করছিলেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। অবাক চোখে দেখছিলেন পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকার ছন্নছাড়া দশা। এখনও ঘোর কাটছে না তাঁদের। বললেন, “এখানটা দিয়েই ঝিলম সে দিন পাগলের মতো বয়ে যাচ্ছিল।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share:

ঝিলমের জলে ভেসে গিয়েছে দোকানির সর্বস্ব। শ্রীনগরের লালচকে। ছবি: এএফপি।

সেই রুদ্ররূপ আর নেই। ঝিলম আজ অনেকটাই শান্ত। লালচক ও হরি সিংহ হাইস্ট্রিট সংযোগকারী আমিরা কদল সেতুর উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এ কথাই বলাবলি করছিলেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। অবাক চোখে দেখছিলেন পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকার ছন্নছাড়া দশা। এখনও ঘোর কাটছে না তাঁদের। বললেন, “এখানটা দিয়েই ঝিলম সে দিন পাগলের মতো বয়ে যাচ্ছিল। সাত দিন আগের কথা। এখন দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে!”

Advertisement

তবে আরও ক’টা দিন আগে যাঁরা শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্র এই লালচকে এসেছিলেন, এই ভগ্ন চেহারাটা হয়তো কল্পনা করতে পারবেন না তাঁরাও। আধভাঙা সেতুটাই এক সময় ভিড়ে থিকথিক করতো। হাট বসতো এখানেই। লম্বা লাইন পড়ত জেলেদের। বিকিকিনি চলত সারা দিন। সেখানে এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। নীরবতা ভাঙছে ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ট্রাকগুলো। যে পথে যানজট লেগেই থাকত, সে রাস্তাই এখন জনমনিষ্যিহীন।

ঝিলমের পার ঘেঁষে দোকানগুলোর ঝাঁপ আজও বন্ধ। হাতে গোনা একটা-দু’টো দোকান খুলেছে। তবে সে বিক্রিবাঁটার জন্য নয়। জিনিস যদি কিছু অক্ষত থাকে, যদি কিছু বাঁচানো যায়, সেই আশায়। আমিরা কদল সেতুর কাছেই গুলাম জিলানির কম্পিউটারের দোকান। দোকানের সামনে ছড়িয়ে বেশ কিছু ল্যাপটপ আর ভাঙা যন্ত্রপাতি। বন্যায় নষ্ট হয়েছে সব। দোকানের বাইরে চেয়ারে বসে জিলানি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ল্যাপটপগুলোর দিকে। কান্নাভেজা গলায় বললেন, “সব শেষ হয়ে গেল ভাই...!” জানালেন, দোকানে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার জিনিস ছিল। একটাও অক্ষত নেই। পাশেই ইমতিয়াজ আহমেদের জুতোর দোকান। একই কথা শোনা গেল তাঁর মুখেও। বললেন, “কিচ্ছু বাঁচেনি।” কী ভাবেই বা বাঁচবে! ঝিলম তো সে দিন পাগলপারা।

Advertisement

সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল আজ। হয়তো তাই শহরের কদাকার চেহারাটা আরও স্পষ্ট হয়েছিল। লালচকের বেশ কিছু অঞ্চল এখনও জলমগ্ন। যেখানে জল নেমেছে, স্তূপাকৃত হয়ে পড়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। সাফাই কাজ শুরু করেছেন পুরসভার কর্মীরা। হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বন্যার পর রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। রিয়াজ আহমেদ নামে এক তরুণের কথায়, “লোকবলের অভাব নেই। সরকার শুধু যথেষ্ট জীবাণুনাশক পাঠাক। তা হলেই হবে। বাকি কাজ আমরাই করে দেব। কোনও ভাবেই যেন রোগ না ছড়ায়!” তাঁর গলায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন