দ্রুত ছুটে আসা একটি গাড়ি ধাক্কা মারে অটোটিতে। ফুসফুস ফেটে যায় ১৭ বছরের নিকির। মেয়েকে আর ফিরে পাননি ডরিস ফ্রান্সিস। কিন্তু তার পর থেকে রোজ তিনি ফিরে গিয়েছেন দিল্লি লাগোয়া জাতীয় সড়কের সেই জায়গাটিতে। গত আট বছর সেখানে যান নিয়ন্ত্রণ করে গিয়েছেন প্রতি সকালে। ষাট ছুঁইছুঁই সেই মহিলা এখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এইমসে ভর্তি।
খবরটি নজরে আসতেই নিজের দফতরের অফিসারদের ডেকে পাঠান নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তিন লক্ষ টাকা অনুমোদন করেন। আজ ঘটা করে সেই কথা জানানো হল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে। চিকিৎসকদের বলে দেওয়া হয়েছে, মেয়ের মৃত্যুর পর যে মা রোদ-জল উপেক্ষা করে মানুষের সেবা করছেন, তাঁর চিকিৎসার যেন ত্রুটি না হয়।
নোট-বাতিল নিয়ে বিরোধীদের তুমুল আক্রমণ ও বিতর্কের ঝড়ের মধ্যে এই ভাবেই নিজের মানবিক মুখটি তুলে ধরতে তৎপর হলেন মোদী। রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস এটাকে টিআরপি-নির্ভর রাজনীতি বলে কটাক্ষ করেছে।
কংগ্রেস সহ-সভাপতি আজ দলের বৈঠকে বলেন, সাধারণ মানুষকে প্রবল দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়ে মোদী এখন ‘টিআরপি’ বাড়াতে নেমেছেন। বস্তুত নোট বাতিলের পর থেকে আমজনতার দুর্ভোগ নিয়ে রোজই বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ছেন প্রধানমন্ত্রী। রোজই অচল থাকছে সংসদ। মোদী সেই সংসদে মুখ খোলেননি বটে। কিন্তু সংসদের বাইরে নোট বাতিলের যুক্তি দিতে গিয়ে তাঁর গলা আবেগে বুজে এসেছে। মায়াবতী খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল’।
বিরোধীদের অন্যতম অভিযোগই হল, মোদীকে সংসদে পাওয়া যায় না। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের মোকাবিলা করেন না। গত কাল তাঁকে দেখা গেল রাজ্যসভায়। তুমুল হট্টগোলে গোটা বিরোধী শিবির যখন তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে সরব, তখনও নির্লিপ্ত তিনি। নিজের দলের নেতারা যখন পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপাতে চাইলেন, নিরস্ত করলেন তাঁদের। মাঝে পনেরো মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি হয়ে গেলেও নিজের আসন ছেড়ে ওঠেননি। সংসদ চলার সময় যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গলা তুলছিলেন, মুলতুবির সময় তাঁদেরই অনেকে আবার একে একে কাছে এলেন সৌজন্য বিনিময় করতে। এডিএমকের সেলভারাজ যেমন। তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েই প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিলেন ‘আম্মা’র। নোট বাতিলের পর ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটির প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী টিডিপি-র ওয়াই এস চৌধুরি তাঁর ঘনিষ্ঠ। তাঁর সঙ্গে চটজলদি সেই বিষয়েও কিছু কথা সেরে নেন প্রধানমন্ত্রী। জয়া বচ্চন এলেন। তাঁর দল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যতই বিরোধ থাক, তাঁর স্বামী অমিতাভ বচ্চন মোদী সরকারের একাধিক প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। এক ফাঁকে রামবিলাস পাসোয়ান এলেন ব্যক্তিগত একটি আর্জি নিয়ে। সেটির নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলেন মোদী। ওই সময়টুকু কার্যত তাঁর খোলামেলা দরবারে পরিণত হল!
মনোনীত সদস্য মেরি কম এগিয়ে এলেন। খানিক ক্ষণ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। কী কথা হল? আজ মেরি জানালেন, ‘‘মণিপুরে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি যাতে অনুষ্ঠানে যান, সেটিই বলতে গিয়েছিলাম।’’ কী বললেন প্রধানমন্ত্রী? মেরি জবাব দিলেন, ‘‘ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির গোড়ায় সময় বার করে যাবেন বলেছেন।’’
রসিকতার ছোঁয়াও ছিল। রাজ্যসভায় বসে প্রধানমন্ত্রী হালকা সুরে বলে গিয়েছেন, ‘‘আমি তো সব সময় ফ্রি। কোনও কাজই নেই। শুধু মানুষের কথা ভাবা ছাড়া। চাইলে যে কেউ যে কোনও সময় আসতে পারেন আমার কাছে।’’