তাৎক্ষণিক তিন তালাক রুখতে অধ্যাদেশ আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথাবিরুদ্ধ, তাই অতীতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এ পি জে আব্দুল কালাম বা শঙ্কর দয়াল শর্মার মতো রাষ্ট্রপতিরা। সে সব জেনেও ভোটের ঠিক আগে আজ সারদা, রোজভ্যালির মতো অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণা এবং তাৎক্ষণিক তিন তালাক রুখতে অধ্যাদেশ আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার। লোকসভায় পাশ হলেও, রাজ্যসভায় সরকারের গরিষ্ঠতা না থাকা আটকে গিয়েছিল এই সংক্রান্ত বিলগুলি। অধ্যাদেশ আনা হয়েছে, কোম্পানি আইন ও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল আইন প্রয়োগেও। তবে ভোটে ধাক্কা খাওয়ার ভয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে অধ্যাদেশ জারির ঝুঁকি নেয়নি কেন্দ্র।
অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশন শেষ হতেই লোকসভা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছে। চলতি সরকারের মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত। তার মধ্যে নতুন সরকার গড়তে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ভোটের আগে মাঝের এই তিন মাসে বিশেষ কোনও আপৎকালীন কারণ ছাড়া লোকসভার বিশেষ অধিবেশন বসার কথা নয়। এই সময়ে সাধারণত অধ্যাদেশ জারি করে নতুন কোনও আইন আনে না সরকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, কারণ তা প্রথাবিরুদ্ধে। যে কারণে অতীতে একাধিক রাষ্ট্রপতি ওই সময়ে ঘোষিত অধ্যাদেশ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
সেই প্রথা ও অতীতের উদাহরণকে অগ্রাহ্য করেই চারটি অধ্যাদেশ এনেছে সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যুক্তি, ‘‘লোকসভায় ইতিমধ্যেই বিলগুলি আলোচনা হয়েছে। পাশও হয়ে গিয়েছিল। কেবল রাজ্যসভায় সংখ্যার অভাবে তা আনা যায়নি। তাই ওই অধ্যাদেশ আনা হয়েছে।’’ লোকসভা নির্বাচনের পরে যে সরকার আসবে তার প্রথম অধিবেশনে ওই অধ্যাদেশগুলিকে হয় পাশ করাতে হবে। নয়তো সেগুলি খারিজ হয়ে যাবে। অতীতে তিন তালাকের ক্ষেত্রে দু’বার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। যার মেয়াদ পরবর্তী লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ ফুরনোর সঙ্গেই শেষ হয়। এ বার মুসলিম মহিলাদের স্বার্থরক্ষার যুক্তি দেখিয়ে ফের অধ্যাদেশ জারি করল সরকার। বিরোধীদের মতে, এই পদক্ষেপ নিছকই ভোটের কথা ভেবে। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আসন বাড়ানোর লক্ষ্যেই সারদা কাণ্ডের কথা উস্কে দিয়ে অনিয়ন্ত্রিক অর্থ লগ্নি প্রকল্প রোধে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। কিন্তু উত্তর-পূর্বের বিক্ষোভ তথা ভোট হারানোর ভয়ে আর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে অধ্যাদেশ জারির পথে হাঁটতে চাননি নরেন্দ্র মোদী।