‘লড়াইটা কাশ্মীরের জন্য, কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নয়’, বার্তা মোদীর

রাজস্থানের টোঙ্ক-এ এক জনসভায় মোদী আজ ইমরানের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ইমরানকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৭
Share:

লড়াইটা কাশ্মীরের জন্য। বললেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী মুখ খুললেন অবশেষে। বললেন, ‘‘লড়াইটা কাশ্মীরের জন্য। কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নয়।’’ মনে করালেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুঝতে যুঝতে কাশ্মীরিরাও ক্লান্ত। পাশে দাঁড়াতে হবে তাঁদের। এই সময়ে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে ছোটখাটো যে ঘটনাই ঘটুক, তাতে গোটা দেশের ক্ষতি। কারণ, এতে কেবল ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর নামে যারা ‘ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, ইনশাল্লা’ স্লোগান তোলে, আর যারা তাদের আশীর্বাদ করে— সেই সব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতই শক্ত হবে।’’ এর পাশাপাশি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উদ্দেশে কথা রাখার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মোদী।

Advertisement

রাজস্থানের টোঙ্ক-এ এক জনসভায় মোদী আজ ইমরানের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ইমরানকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেছিলেন। সে প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘লোকে তাঁকে ক্রিকেটার হিসেবে জানে। আমি তাঁকে বললাম, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যথেষ্ট লড়াই হয়েছে। পাকিস্তান কিছুই পায়নি, প্রতি বারই আমরা জিতেছি। আসুন, আমরা এ বার দারিদ্র ও নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই করি। এতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, মোদীজি, আমি পাঠানের ছেলে। সত্যি বলি। খাঁটি কাজ করি।’’ এর পরেই ইমরানের উদ্দেশে মোদীর চ্যালেঞ্জ, ‘‘পাঠানের সন্তান হলে, আর কথার দাম থাকলে, সেটা প্রমাণ করে দেখান।’’

পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারির জইশ হামলার পর মোদী বলেছিলেন, হামলাকারী ও তাদের সাহায্যকারীদের ‘খুব বড় ভুল’-এর ‘খুব চড়া দাম’ দিতে হবে। এতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেই সূত্রে মোদী আজ ফের সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের ‘দানাপানি’ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভারতীয় সেনার ভয়ে ও-পারে কেমন ‘থরহরিকম্প’ শুরু হয়েছে, শুনিয়েছেন সেই কথা। দাবি করেছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন ভারতের পাশে। এরই সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার দায়টা চাপিয়েছেন পুরোপুরি পাক প্রধানমন্ত্রীর উপরে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘রুটিন’ অভিযান ঘিরে আতঙ্ক বাড়ছে কাশ্মীরে

কূটনীতির লোকজনেরা অনেকেই বলে থাকেন, পাক সেনার ‘পুতুল’ ইমরান সেটাই বলতে বা করতে পারেন, আইএসআই এবং পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়া তাঁকে দিয়ে যা বলাতে বা করাতে চাইবেন। ফলে জনসভায় মোদীর এই বক্তব্যে আদৌ কোনও ফল হওয়ার আশা করছেন না অনেকেই। আবার পুলওয়ামায় হামলার পরে গোটা দেশে কাশ্মীরিদের নিশানা করার বিরুদ্ধে মোদী আজ যা বক্তব্য রেখেছেন, সেটাও এসেছে পাক্কা ন’দিন ধরে সে সব চলার পরে। এই ক’দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরিদের আক্রান্ত হতে দেখে বিরোধীরা দাবি করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে মুখ খুলুন এ সবের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ভোটের মুখে দেশপ্রেমের জিগির তুলতে বিজেপি ও সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনই উস্কানি দিচ্ছে।

অবশেষে মুখ খুললেন মোদী। সেটাও ঘটল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক তিনটি চাপের মুখে। এক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজে থেকে হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির রিপোর্ট চেয়েছে বৃহস্পতিবার। দুই, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র ও ১০ রাজ্যকে কাশ্মীরিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে এর পরের দিন। তিন, আজ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বিদ্বেষ মুছতে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। দিল্লিতে এক দল ছাত্রের সঙ্গে আলোচনায় রাহুল বলেন, ‘‘মহাবীর, বুদ্ধ, অশোক ও গাঁধীর দেশে এখন ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি কিছু বলেন, তবে গোটা দেশ ঠান্ডা হতে পারে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী যা ভাবেন ও বলেন, সেটা গোটা ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে।’’ এর পরপরই কাশ্মীরিদের উপরে হামলা নিয়ে রাজস্থানের জনসভায় নীরবতা ভাঙেন মোদী। ডাক দেন কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়ানোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন