পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির শুধুমাত্র আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বসে কাবাবই খাচ্ছেন না। অথবা পহেলগামের কায়দায় পরবর্তী হামলার জন্য পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট সংগঠনগুলির সঙ্গে বসে কৌশল রচনাই করছেন না। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, তিনি বাংলাদেশের প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে সেই অংশকে জোরদার এবং চিহ্নিত করার চেষ্টাও করছেন যারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত।
এর আগেই কূটনৈতিক শিবির জানিয়েছিল, বাংলাদেশের ট্রাইবুনাল শেখ হাসিনাকে যে প্রক্রিয়ায় মত্যুদণ্ড দিয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং তাতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ‘সমস্ত পক্ষের’ সঙ্গে কথা বলে সাউথ ব্লক বার্তা দিতে চেয়েছে, আওয়ামী লীগের মতামতও জানতে চাওয়া হবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে। সদ্য ভারতে সফর করে যাওয়া সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও ভারত জানিয়েছে, সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হোক বাংলাদেশে, এটাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাম্য।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদকে উস্কে দিয়ে সে দেশের বাঙালি সত্তাকে লঘু করে দেওয়ার একটা চেষ্টা হচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা শিবিরের কাছে। মনে করা হচ্ছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিটা পদক্ষেপ করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট ছক কষেই। সে দেশের কিছু মৌলবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগ এবং ভারতের মধ্যে সমীকরণ তৈরি করে উভয়কেই বার্তা দিতে চাইছে। আগামী বছর বাংলাদেশে ভোটের আগে হাসিনা-বিরোধী এবং সেই সঙ্গে ভারত-বিরোধী আবেগ তৈরি করাটা লক্ষ্য। বাংলাদেশের মৌলবাদীদের এক বড় অংশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য ভারতকে দোষ দেয়। যদিও তাদের পাসপোর্ট বাংলাদেশেরই, কিন্তু ইসলামাবাদের সঙ্গে আবেগের সম্পর্কে এই অংশ যুক্ত। এরাই হাসিনাকে ভারতের সঙ্গে এক করে দেখে ও প্রচার করে। উদ্দেশ্য, দেশের প্রগতিশীল, বহুত্ববাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলিকে আক্রমণ করা। হাসিনার জমানায় ভারতের সহায়তায় তৈরি বিভিন্ন প্রকল্প অচল করে দেওয়া।
এমন সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে, জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সংযোগের পথ তৈরি করছে। বাংলাদেশ তৈরির মূল ধারণাকে নষ্ট করেই তা করা হবে। রাওয়ালপিন্ডির ফিল্ড মার্শাল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশে শক্তিশালী পাক সেনাঘাঁটি তৈরি করতে। উদ্দেশ্য, ভারতকে চাপে রাখা। সূত্রের দাবি, ভারতের দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিষয়ে সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তা হল, আইনি পদ্ধতিতে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং আন্তর্জাতিক মতবাদকে অগ্রাহ্য করে ত্রুটিপূর্ণ ভাবে মামলা চালানো। তারই সর্বশেষ সংস্করণ হল শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিচার। যে শক্তি একাত্তরে দেশকে স্বাধীন করেছিল, তাকেই নিশানা করাটা যার উদ্দেশ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, গত বছর ৫ অগস্টের পরে যে সমস্ত সমাজকর্মী, সাংবাদিক, প্রাক্তন বিচারক, ক্রীড়াবিদ, ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে এখনও। এই বিপুল সংখ্যায় হত্যার মামলা দায়ের করায় বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হচ্ছে। ৪০০ জনের কাছাকাছি আওয়ামী লীগের প্রাক্তন মন্ত্রী, সাংসদ এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১৭০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাগুলির বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে