সীমান্তে পাক বাহিনীর হামলা সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই করা হচ্ছে। এই মর্মে আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলিকে রিপোর্ট দিলেন সেনা গোয়েন্দারা।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে অরুণ এখন তাঁর নতুন বাসভবন ২ নম্বর কৃষ্ণ মেনন মার্গ থেকেই সরকারি কাজকর্ম দেখাশোনা শুরু করেছেন। পাকিস্তান নিয়ে তিনি তিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতি ঘণ্টায় তাঁর কাছে পরিস্থিতির রিপোর্ট আসছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, পাক বাহিনী কাশ্মীরের বন্যার সুযোগ নিয়ে আক্রমণের রণকৌশল নেয়। এই সময়ে প্রতি বছরেই পাকিস্তান জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করে। এ বারের পাক কৌশল ছিল, সীমান্তের যে অংশের উচ্চতা বেশি সেখান থেকে পাক বাহিনী গোলাবর্ষণ চালাবে। আর নিচু অংশ দিয়ে পাক জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটানো হবে। তাই নিয়ন্ত্রণরেখায় (যেটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন) পুঞ্চ সেক্টর ছাড়া সে ভাবে গোলা বিনিময় হয়নি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তে (যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধাসেনার অধীন) হামলা অনেক বেশি হয়েছে।
অরুণ জেটলি এবং রাজনাথ সিংহ দু’জনেই পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রণকৌশল রচনায় সক্রিয় ভুমিকা নিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। অরুণ জেটলিকে সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, এক দিকে পাক হামলার জবাব দিয়েছে তারা। পাশাপাশি কাশ্মীরে ঢুকে পড়া প্রায় ১৮ জন জঙ্গিকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমরান খানের বিদ্রোহের পরে রাজনৈতিক ভাবে এখন যথেষ্ট দুর্বল নওয়াজ শরিফ। ফলে সেনাবাহিনী, আইএসআই ও মোল্লাতন্ত্রের সঙ্গে আপাতত নওয়াজ সন্ধি করেছেন। পাকিস্তানের এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হওয়ার পর পাকিস্তান স্বভাবতই আক্রমণাত্মক লাইন নিয়েছে। অরুণ জেটলি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মনমোহন সিংহের সময়েও সীমান্তে পাক হানা হয়েছে। কিন্তু সেই সময় পাক আক্রমণ সত্ত্বেও মনমোহন সিংহ পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করার কথা বলতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের অবস্থান একটু ভিন্ন। আমরাও শান্তি আলোচনা চাই। আমরাও দ্বিপাক্ষিক স্তরে কাশ্মীর-মীমাংসার জন্য উদ্যোগী হতে আগ্রহী। কিন্তু পাকিস্তান যদি সন্ত্রাস থেকে বিরত না হয় তাহলে আলোচনা হতে পারে না। বরং ভারতও আক্রমণের জবাব দিচ্ছে।”
সেনাবাহিনীর রিপোর্টে আরও বলা হচ্ছে, পাকিস্তান বিষয়টিকে ক্রমশ আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ গত কাল একটি চিঠি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবকে দিয়েছেন। তাতেও এটা স্পষ্ট। পাকিস্তান চাইছে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সমঝোতা করানো সম্ভব হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন অরুণ জেটলি। এই কেনার প্রতিক্রিয়াকে অনেক সরল করা হচ্ছে। আগে অস্ত্র কেনার কমিটির বৈঠক হত ছ’মাসে একবার। এখন থেকে এই বৈঠক হবে মাসে এক বার। অস্ত্র কেনার ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেওয়ায় এখন টেন্ডারের ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিদেশি সংস্থাগুলিও সরাসরি দরপত্র জমা দিতে পারবে।