(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর থেকে ভারত সরকারকে পর পর চার বার চিঠি দিল পাকিস্তান। প্রতি বারই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, চিঠিগুলি এসেছে পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ আলি মুর্তাজার কাছ থেকে। ভারতের জলশক্তি মন্ত্রক চারটি চিঠিই গ্রহণ করেছে, তার পর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। তখনই স্থগিত করে দেওয়া হয় সিন্ধু চুক্তি। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারত জানিয়ে দেয়, যত দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করছে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
প্রথম থেকেই ভারতের সিন্ধু চুক্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ জানান, এই চুক্তির উপরে ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। তিনি দাবি করেন, ভারতের সিদ্ধান্ত বেআইনি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি। শরিফের দাবি, সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে ভারত জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে ভারত অবস্থানে অনড়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না। সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া বন্ধ হলেই সিন্ধু চুক্তি বিবেচনা করবে নয়াদিল্লি।
পহেলগাঁওয়ের হামলার পর পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালিয়ে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। প্রত্যাঘাতের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এর পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায় এবং দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন সংঘাত চলে। গত ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে সংঘর্ষবিরতি হলেও সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান বদলায়নি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, ‘সিঁদুর’ অভিযানের পরেও সিন্ধু চুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে পাকিস্তান থেকে একটি চিঠি এসেছিল।
সিন্ধু এবং তার দু’টি উপনদী বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা পাকিস্তানমুখী। এই তিন নদীর জলের উপর পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ নির্ভর করে থাকে। সিন্ধুর বাকি তিন উপনদী বিপাশা, শতদ্রু এবং ইরাবতী ভারতের উপর দিয়েই বইছে। পাকিস্তানের আশঙ্কা, সিন্ধু চুক্তির শর্ত না মানলে পাকিস্তানমুখী নদীগুলির জলপ্রবাহ অনিয়মিত হয়ে পড়বে। ফলে জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে পাকিস্তান জুড়ে। সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।