(বাঁ দিক থেকে) চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার এবং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার তিন দিনের চিন সফরে যাচ্ছেন। সোমবারই রওনা দেওয়ার কথা তাঁর। গন্তব্য বেজিং। সেখানে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেবেন দার। বৈঠকের তৃতীয় পক্ষ হিসাবে থাকবে আফগানিস্তান। মঙ্গলবারের বৈঠকে দার এবং ওয়াংয়ের সঙ্গে থাকার কথা আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরও। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন দেশের বিদেশ মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে দারের চিন সফরের কথা জানিয়েছে। তিনি পাকিস্তানে ফিরবেন ২২ মে।
বেজিংয়ের এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার মূল কেন্দ্রেই থাকতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি। সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, আলোচনায় তা উঠে আসতে পারে। মূলত এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং শান্তিস্থাপন নিয়ে আলোচনা করবেন তিন দেশের বিদেশমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ভারত-পাক সংঘর্ষের আবহে ভারতের অন্যতম ‘সমর্থক’ হিসাবে উঠে এসেছিল আফগানিস্তানের নাম। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ দাবি করেছিলেন, একমাত্র আফগানিস্তান এবং ইজ়রায়েল এই পর্বে ভারতকে সমর্থন করেছে, আর কেউ নয়। সেই আফগানিস্তানের মন্ত্রীর সঙ্গেই এ বার বৈঠকে বসতে চলেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী।
আফগানিস্তানের মুত্তাকির সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কথা বলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আফগান মুলুকে তালিবান ফের ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কথা হয়েছে। চলতি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত অনেকের। জয়শঙ্কর জানান, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার নিন্দা করার জন্য আফগানিস্তানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দুই দেশের ‘চিরন্তন’ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভারত-আফগান বোঝাপড়া আরও নিবিড় করার বার্তাও দিয়েছেন। এ বার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চলেছেন মুত্তাকি। সঙ্গে থাকছে চিন।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের। সেই ঘটনায় প্রথম থেকেই পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিদের ঘাঁটি। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। দুই দেশের মধ্যে টানা চারদিন সংঘর্ষ চলেছে। গত ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই পর্বে আমেরিকা থেকে শুরু করে চিন, রাশিয়া, বিভিন্ন দেশ ভারত এবং পাকিস্তানকে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দিয়েছিল। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার নিন্দা করলেও দুই দেশকে সংযমের কথা বলা হয়েছিল বার বার। চিনের বিদেশমন্ত্রীও দার এবং জয়শঙ্করকে সেই বার্তা দিয়েছিলেন। সংঘর্ষবিরতির পর চিন-পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ত্রিপাক্ষিক আলোচনার দিকে নজর রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের।