ব্যঙ্গগীতিতে জমজমাট অসমের ভোট

নাটকের নাম— ‘বাদ দিয়া হে’। প্রধান চরিত্রে তরুণ গগৈ। পার্শ্ব নায়ক রকিবুল হুসেন, প্রদ্যোৎ বরদলৈ। খলনায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা, বদরুদ্দিন আজমল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

নাটকের নাম— ‘বাদ দিয়া হে’। প্রধান চরিত্রে তরুণ গগৈ। পার্শ্ব নায়ক রকিবুল হুসেন, প্রদ্যোৎ বরদলৈ। খলনায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা, বদরুদ্দিন আজমল।

Advertisement

ছবির নাম— টেঙা আম। বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদী।

প্যার়ডির লাইন— মিসা মাতি মাতি। আদতে সুরকার বাবু। কিন্তু গানের প্যারডি স্বত্ব আপাতত তরুণ গগৈ, বদরুদ্দিন আজমলদের হাতে।

Advertisement

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে থেকেই ভোটমুখী পোস্টার, প্যার়ডিতে ছেয়ে গিয়েছে অসম। কংগ্রেস-বিজেপি-এআইইউডিএফ পিছিয়ে নেই কেউই। পোস্টারের পাশাপাশি ‘থিম সং’, ‘প্যারডি অ্যালবাম’ প্রকাশ করে রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে কংগ্রেস।

এবারের ভোটের বাজারে সবচেয়ে হিট সংলাপ নিঃসন্দেহে মুখ্যমন্ত্রী গগৈয়ের ‘বাদ দিয়ে হে’ (আরে বাদ দাও তো)। বিদ্রুপের আবহে গগৈয়ের আবেদনপত্র নিয়েও শুরু হয়েছে ব্যঙ্গ।

কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদনপত্র নেওয়া হবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। সাধারণ প্রার্থীদের ৩০ হাজার টাকা ও বিধায়কদের ১ লক্ষ টাকার ড্রাফ‌্‌ট-সহ আবেদন করতে হচ্ছে। দলের ভাঁড়ারে এর মধ্যেই আবেদনপত্রের সৌজন্যে জমা পড়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি।

গগৈ তাঁর এবারের আবেদনপত্রে নিজের বয়েস লিখেছেন ৭৯ বছর ১১ মাস। জন্মের তারিখ ১৯৩৬ সালের ১ এপ্রিল। তা নিয়ে বিরোধীরা মজা করার নতুন হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন রূপে নিজের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের উদ্বোধন করেছেন গগৈ। দুই জায়গাতেই নিজের জন্মের তারিখ ও বছর হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন ১১ অক্টোবর ১৯৩৪। সেই হিসেবে তাঁর বয়েস অন্তত ৮১ বছর। কংগ্রেসের নেতারাও মুখ্যমন্ত্রীকে অশীতিপর বলেই আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা ও এবারে দলীয় প্রার্থী হতে চেয়ে জমা দেওয়া আবেদনপত্রে গগৈ নিজের জন্মতারিখ লিখেছেন ১৯৩৬ সালের ১ এপ্রিল!

আবেদনপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বয়েস আশির নীচে রাখার মরীয়া প্রয়াস দেখে দলীয় কর্মীরাও মুখ টিপে হাসছেন। বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘নতুন জন্মসালের সঙ্গে তারিখটাও ভালই বেছেছেন গগৈ। মানুষকে ‘এপ্রিল ফুল’ বানানোই তো কংগ্রেসের কাজ।’’ গতবারের হলফনামায় গগৈ যোরহাটের ঠিকানার সঙ্গে দিসপুরের পিনকোড দিয়েছিলেন। বিজেপি ও এআইইউডিএফের নেতাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বয়সের ভারে প্রায়ই ভুলভাল কথা বলেন। নিজের বলা প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। সভায় বা সাংবাদিক সম্মেলনেও কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু কংগ্রেসের এমন অবস্থা— যে বর্ষীয়ান নেতাকেই বয়স কমিয়ে দলের হাল ধরতে হচ্ছে। কোনও বিকল্প নেই। অবশ্য সব সমালোচনাকেই ‘বাদ দিয়া হে’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন গগৈ।

নরেন্দ্র মোদীর কোকরাঝাড় সফরের আগেই কংগ্রেস গুয়াহাটি, বড়োভূমির বিভিন্ন স্থানে ব্যঙ্গাত্মক পোস্টার লাগাতে শুরু করে। সেখানে মোদীর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, একই কথা বিভিন্ন সুরে বলাকে ইঙ্গিত করে কার্টুন আঁকা হয়েছিল। তখন বিজেপি কংগ্রেসের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে অবশ্য গগৈকে নিয়ে তারাও একই পথে হেঁটেছে।

বিরোধী দলগুলিকে পাল্টা চাপে রাখার জন্য অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে কংগ্রেস। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গানের স্বত্ব কিনে নিয়েছে তারা। পরে, সুরকার-গীতিকার নিয়োগ করে বিরোধী দলগুলিকে ঠুকে কথা সাজানো হয়েছে। সেই সব গান নিয়ে রীতিমতো সিডিও প্রকাশ করেন গগৈ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত।

রাজ্যের ভোট প্রচারের ইতিহাসে যা অভূতপূর্ব ঘটনা।

এবারের ভোটে কংগ্রেসের ‘থিম সং’-ও থাকছে। তাতে সুর দিয়েছেন পলাশ গগৈ। গেয়েছেন দীক্ষু। হিন্দিভাষীদের ধরতে থিম সংয়ের ভোজপুরি সংস্করণ গাওয়ানো হয়েছে কল্পনা পাটোয়ারিকে দিয়ে।

বাবুর জনপ্রিয় গান ‘পেডেল মারি মারি’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি টানাপড়েন। সব দলই ওই গানের সুরে কথা বসিয়ে আসর মাতাচ্ছে। কংগ্রেস তো ‘পেডেল মারি’ আর ‘জিলে লে’ গানের প্যারডিগুলি অসমীয়ার পাশাপাশি নেপালি, বড়ো, ভোজপুরি, বাংলাতেও অনুবাদ করেছে।

গগৈয়ের সোজা কথা, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছ থেকে আমরা প্রচারের ব্যাপারে শিক্ষা নিয়েছি। মোদী রাজনৈতিক নেতার চেয়েও বেশি ‘মার্কেটিং গুরু’। তাই এ বার বাইরের প্রচার বা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে আমরাও পিছিয়ে থাকব না। নতুন প্রজন্মকে টানকে নতুন ধরণের প্রচার খুবই দরকারি।’’

কংগ্রেসের মতোই গানে আসর মাতাচ্ছে এআইইউডিএফও। দু’দলের নেতাদের মতে, আদর্শ ও বলিদানের কচকচানির থেকে মজার গানে আসর বেশি জমছে। আসর ফেরত

মানুষও গানগুলি গুণগুণ করছে। কংগ্রেস তো আসর জমানোর জন্য পেশাদার বক্তা, উপস্থাপক, কৌতুকাভিনেতাদেরও ভাড়া করছে।

ভাষণের নাটকীয়তাতে কম যাচ্ছেন না গগৈ, হিমন্ত, রেকিবুদ্দিন, রকিবুলদের মতো নেতারাও। গগৈ লাচিত বরফুকনের মূর্তি উদ্বোধনে গিয়ে বলেন, ‘‘আমার গায়ে লাচিতের রক্ত বইছে।’’ চিলারায় দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর শরীরে বহমান রক্ত বদলে চিলারায়ের হয়ে যায়। আবার কখনও স্যু-কা-ফার রক্ত প্রবেশ করে গগৈয়ের দেহে। তা নিয়ে

বিজেপি পোস্টার ও ফেসবুকে কম ব্যাঙ্গ করেনি।

প্রাক্তন মন্ত্রী অকন বরা বলে বসেন, ‘‘কংগ্রেস এত উন্নয়ন এনেছে অসমে যে মানুষ পাঁচ টাকায় মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খেতে পারছেন।’’ বিরোধীরা তাঁকে বিদ্রুপ করে বিভিন্ন রাস্তায় ‘পাঁচ টাকায় মাংসের হোটেল’ খুলে বসে। মন্ত্রী এক সময় যুবকদের শিক্ষাবিস্তার নিয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘‘কেবল বিএ পাশ করলেই হবে না, আপনাদের গ্র্যাজুয়েট হতে হবে।’’ সেই আহ্বান নিয়ে কৌতুক এখনও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন