সাংমার শেষকৃত্যে মিটল দলমতের ভেদ

রাজ্যিক মর্য্যাদায় তুরায় সাংসদ পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা তুরার আটবারের সাংসদ পূর্ণ গত কাল দিল্লির বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ সকালে দিল্লি থেকে বিমানে তাঁর দেহ গুয়াহাটি আনা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৫
Share:

পূর্ণ সাংমার মৃতদেহের সামনে চলছে প্রার্থনা। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যিক মর্য্যাদায় তুরায় সাংসদ পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা তুরার আটবারের সাংসদ পূর্ণ গত কাল দিল্লির বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ সকালে দিল্লি থেকে বিমানে তাঁর দেহ গুয়াহাটি আনা হয়। সেখান থেকে বিমানবাহিনীর চপারে মরদেহ তুরার দোবাসিপাড়া হেলিপ্যাডে আসে। প্রায় ৫০০ গাড়ির কনভয়ে পূর্ণর দেহ তুরার বাসভবনে আনা হয়। পথজুড়ে ছিল অগণিত মানুষের ভিড়। অন্ত্যাষ্টিতে সাংমার দুই পুত্র বিধায়ক জেম্স সাংমা ও বিধায়ক কনরাড সাংমা এবং কন্যা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আগাথার সঙ্গে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, উত্তর-পূর্ব উন্নয়নমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, সাংসদ ওয়ানসুক সিয়েম, ভিনসেন্ট পালা, রাজ্যপাল ভি সম্মুগনাথন-সহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

Advertisement

সাংমার মৃত্যুতে রাজ্যে সাতদিনের শোক পালন করা হচ্ছে। অর্ধনমিত থাকছে জাতীয় পতাকা। রাজ্যের মানুষের কাছে তিনি ‘কিং অফ দ্য গারোজ’ বা গারোদের রাজা নামেই পরিচিত ছিলেন।

রাজনীতিতে বিপরীত মেরুতে থাকলেও সাংমার মৃত্যুতে বিধানসভাতেই দু’দফায় কান্নায় ভেঙে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। তিনি জানান, তাঁর বাবা-মা ছিলেন পূর্ণ সাংমার শিক্ষক। তাই তাঁদের আমপাতির বাড়িতে পূর্ণ সাংমার নিত্য যাতায়াত ছিল। পূর্ণই রাজ্যকে দেশের মানচিত্রে উজ্জ্বল করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে মেঘালয় তথা উত্তর-পূর্বের একটি যুগের অবসান হল। রিজিজু বলেন, পূর্ণই প্রথম উত্তর-পূর্বের মানুষের আশা-আকাঙ্খা, দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেছিলেন। ভারতবাসীর কাছে উত্তর-পূর্বের মুখ ছিলেন তিনি।’’ জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরির জন্য পূর্ণ সাংমার পরামর্শ নিতাম।’’

Advertisement

ইউডিপি সভাপতি তথা বিধায়ক পল লিংডোর মতে, গারো পাহাড়ে বরাবরের অপরাজেয় পূর্ণ যৌবনের পুজারি ছিলেন। মুকুল সাংমা, বিরোধী দলনেতা ডনকুপার রয়, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াংদের মতে, তাঁর প্রাণশক্তি ছিল অননুকরণীয়, তেমনই ছিল স্মৃতিশক্তি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। কখনও উপজাতিদের সঙ্গে নাচতে নেমে যেতেন, কখনও কাঁধে তুলে নিতেন ঢোল। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং জানান, সাংমার প্রেরণাতেই তাঁরা রাজনীতিতে এসেছিলেন।

পুত্র তথা মেঘালয়ের বিরোধী দলনেতা কনরাড বলেন, ‘‘আমরা চার ভাইবোন ব়ড্ড দুষ্টু ছিলাম। মা বাবাকে শাসন করতে বললেই বাবা বলত, তাঁর উপরে গারো পাহাড়ের ভার। এই চারজনকে সামলানোর ভার মাকেই নিতে হবে। গারো সমাজকে নিজের সন্তানের মতোই ভালবাসতেন বাবা। সেইজন্যই তাঁকে ভালবেসে গারো পাহাড়ের রাজা বলতেন মানুষ।’’

মেঘালয়ের ৪৪ বছরের ইতিহাসে ২০ বার সরকার বদল হয়েছে। পূর্ণ সাংমা নিজেও অনেকবার দলবদল করেছেন। কিন্তু দরিদ্র পশুপালক কিশোর থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং লোকসভার স্পিকার হয়ে ওঠা পূর্ণর স্বপ্ন ছিল, মেঘালয়ে স্থায়ী সরকার ও স্থিতিশীল সমাজ গড়ার। পূর্ণর মৃত্যুর পরে, সব রাজনৈতিক বিরোধ পাশে সরিয়ে যে ভাবে রাজ্যের সব দলের নেতা তথা উত্তর-পূর্বের সব মুখ্যমন্ত্রী-নেতারা তাঁর স্মৃতিতে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন— তাতে অন্তত একটি দিনের জন্য হলেও পূর্ণর স্বপ্ন সফল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন