অসমে আহত ১৮

গাছে ধাক্কা মেরে সেতু ভেঙে ঝুলে পড়ল ইঞ্জিন

ঝড়ে উপড়ে রেললাইনে পড়েছিল বিশাল এক শিমুল গাছ। মেঘলা ভোরের অল্প আলোয় তা বুঝে উঠতে সময় লেগে গিয়েছিল ট্রেন চালকদের। বিপদ বুঝে যতক্ষণে তাঁরা ব্রেক কষেন, ততক্ষণে গাছে ধাক্কা মেরে সেতুর রেলিং ভেঙে নদীর উপরে ঝুলে পড়ে ইঞ্জিন। লাইনচ্যুত হয় আলিপুরদুয়ার থেকে গুয়াহাটিগামী আপ সিফুং প্যাসেঞ্জারের পাঁচটি কামরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুবুরি ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০৩:১২
Share:

সেতুর রেলিং ভেঙে চম্পাবতী নদীতে পড়ে যাওয়া সিফুং প্যাসেঞ্জারের ইঞ্জিন। ছবি : রাজীব চৌধুরী।

ঝড়ে উপড়ে রেললাইনে পড়েছিল বিশাল এক শিমুল গাছ। মেঘলা ভোরের অল্প আলোয় তা বুঝে উঠতে সময় লেগে গিয়েছিল ট্রেন চালকদের। বিপদ বুঝে যতক্ষণে তাঁরা ব্রেক কষেন, ততক্ষণে গাছে ধাক্কা মেরে সেতুর রেলিং ভেঙে নদীর উপরে ঝুলে পড়ে ইঞ্জিন। লাইনচ্যুত হয় আলিপুরদুয়ার থেকে গুয়াহাটিগামী আপ সিফুং প্যাসেঞ্জারের পাঁচটি কামরা। একটি কামরা আবার অন্য কামরার ঘাড়ে উঠে যায়। ট্রেনের দুই চালক এবং ১৬ জন যাত্রী আহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়।

Advertisement

অসমের কোকরাঝাড় জেলার সালাকাঠি এবং চিরাং জেলার বাসুগাঁও রেল স্টেশনের মাঝে চম্পাবতী নদীর উপরে রেল-সেতুতে শনিবার ভোরে ঘটেছে ওই কাণ্ড। বিকট আওয়াজ পেয়ে উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। পরে রেল পুলিশ আহতদের বাসুগাঁও রেল হাসপাতাল এবং বঙ্গাইগাঁও জেলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

কোকরাঝাড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুরজিৎ সিংহ পানেসর বলেন, “ঝড়ে রেল লাইনে পড়ে থাকা প্রকাণ্ড গাছে ধাক্কা লেগে এই ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে চালকদের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে রেল।” রেল সূত্রের খবর, শুক্রবার গভীর রাতে বাসুগাঁও ও লাগোয়া এলাকায় একপ্রস্ত ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। ঝড়ের দাপটে বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ে। তাদেরই একটি ভেঙে পড়ে রেল লাইনের উপরে। কিন্তু ঝড়ের দাপটের কথা জেনেও রেল কর্তৃপক্ষ কতটা সতর্ক ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে সংক্রান্ত প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (আলিপুরদুয়ার) সঞ্জীব কিশোর বলেন, ‘‘কারও কোনও কর্তব্যে গাফিলতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

শুক্রবার রাতে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ছাড়া সিফুং প্যাসেঞ্জারে উঠেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইউনিস আলি। ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন গুয়াহাটি। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘সালাকাঠি স্টেশন ছাড়ার একটু পরেই ( ভোর ৫টা ২০) প্রচণ্ড শব্দে ব্রেক কষে ট্রেনটা। বাঙ্ক থেকে ছিটকে পড়ি। মাথায়-পায়ে চোট লাগে।’’ ইউনিসের মতোই জখম আর এক লাইনচ্যুত কামরার যাত্রী কোকরাঝাড়ের পানিজানির মুদির দোকানের মালিক আব্দুল সালেম। তাঁর আতঙ্ক, ‘‘ট্রেন থামার পরে নেমে দেখি, লাইনে পড়ে থাকা গাছটা সম্ভবত ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কায় দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। সেতুর পাশে বেশ খানিকটা জায়গা ট্রেনের ধাক্কায় তুবড়ে গিয়েছে। আর সেতুর রেলিং ভেঙে ইঞ্জিনটা নদীর উপরে ঝুলছে! সময়ে ব্রেক কষা না হলে হয়তো সবশুদ্ধু নদীতে গিয়ে পড়তো!’’

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসুগাঁওয়ের বাসিন্দা জয়ন্ত দেবনাথ, হীরকজ্যোতি মেধিরা বলেন, ‘‘ভাগ্যিস চালকেরা ব্রেক কষেছিলেন! তা না হলে গাছে ধাক্কা মেরে ট্রেনের ইঞ্জিনটা যে ভাবে নদীর উপরে ঝুলে পড়ল, আমরা তো ভাবলাম ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে গেল বোধ হয়!’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘শুক্রবার রাতে এই এলাকায় যে ভাল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে তা তো রেলেরও অজানা ছিল না। ওরা কি লাইন পরীক্ষা করার ব্যাপারে আর একটু সতর্ক হতে পারত না!’’

আহত যাত্রীদের মধ্যে শিলিগুড়ির এক জন, আলিপুরদুয়ারের তিন জন রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে এক জন বিহারের , অন্যেরা অসমের বাসিন্দা। উদ্ধার-পর্ব শেষ হতেই ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতি শুরু করে রেল। ঝুলন্ত ইঞ্জিন তোলার চেষ্টা শুরু হয়। তবে রাত পর্যন্ত সেটি তোলা যায়নি।

দুর্ঘটনার ঘণ্টা দু’য়েক পর থেকেই বঙ্গাইগাঁও–বাসুগাঁও ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু হয় বলে জানিয়েছে উত্তর-পূর্ব রেল। তবে দুর্ঘটনার জেরে দু’টি এক্সপ্রেস এবং আটটি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, বেশ কিছু ট্রেনের সময়সূচিও বদলানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন