১৮ বছর ঝুলে থাকার পর ১৩ মার্চ শিলচর-লামডিং রেল লাইনে ব্রডগেজের ইঞ্জিন চালানো হয়। পরে চলে বেশ ক’টি পাথরবোঝাই ট্রেন, মালগাড়িও। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি আজও। ফলে ছ’মাসের মেগাব্লক (সমস্ত ধরনের রেল চলাচল দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া) দশমাস হতে চলল। এর ফলে দক্ষিণ অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের মানুষ দুর্ভোগে। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, অগস্টে যাত্রী-ট্রেন চলবে এই রুটে। সিটিজেন ফোরাম, শিলচরের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, কথার খেলাপ হলে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবেন তাঁরা।
২০০ কিলোমিটার রেললাইনের গজ পরিবর্তন দেড় দশকেও সম্পন্ন না হওয়ায় ফোরামের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সংগঠনের হয়ে মামলা করেছিলেন ধ্রুবকুমার সাহা ও শ্যামলকান্তি দেব। বিবাদীরা হল ভারত সরকার, অসম সরকার ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার। সেই মামলার রায়ে হাইকোর্ট ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করতে রেলকে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ অমান্য হলে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত হতে হবে বলেও বিচারপতি সেই রায়ে আগাম উল্লেখ করে দেন।
হাইকোর্টের রায়ের এই অংশটুকু স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিটিজেন ফোরাম-এর পক্ষ থেকে বিবাদীদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তাঁরা জানতে চায়, প্রথমে ইঞ্জিন, পরে মালগাড়ি চালালেও যাত্রীবাহী ট্রেনের চলাচল শুরু হয়নি আজও। তাতে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার মামলা করা হবে না।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পণ্ডিত চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের নির্দেশ মতো মার্চের মধ্যেই গজ পরিবর্তনের কাজ শেষ করেছেন। ২৭ মার্চ থেকে মালগাড়ি চলছে। কিন্তু যাত্রীট্রেন চালানোর জন্য রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের পরিদর্শন বাধ্যতামূলক। লামডিং-হাফলং পরিদর্শন শেষ হলেও হাফলং-শিলচর অংশের এই বাধ্যতামূলক কাজটি হয়ে উঠছিল না। গত মাসের ২২-২৩ তারিখে সেফটি কমিশনার ওই অংশ পরিদর্শন করেন। এখনও তিনি তাঁর রিপোর্ট পেশ করেননি। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় বলে অজিতবাবু জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, রিপোর্টে ইতিবাচক অভিমত দেওয়া হলে তাঁরা অগস্টে যাত্রীট্রেন চালাতে পারেন।
নতুন ব্রডগেজ ট্র্যাক সম্পর্কে আশ্বস্ত করে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এ পর্যন্ত ৩৬টি পণ্যবাহী ট্রেন চলেছে। এর মধ্যে দু’টি মালগাড়ি এসেছিল কাছাড় কাগজ কলের কয়লা নিয়ে। এ ছাড়া চলেছে ৮৪টি পাথরবোঝাই ট্রেন।
সিটিজেন ফোরাম অবশ্য তাঁদের এই জবাবে পুরো সন্তুষ্ট নন। ধ্রুবকুমার সাহা, শ্যামলকান্তি দেব-সহ ফোরামের কর্মকর্তা মিহিরলাল রায়, সন্তোষ গুপ্ত, অনন্তকুমার নাথ, রত্নাঙ্কুর ভট্টাচার্যরা জানিয়ে দিয়েছেন, অগস্ট পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। এরপরও যাত্রীট্রেন না চললে হাইকোর্টে তাঁরা আদালত অবমাননার মামলা করবেন।
তাঁরা জানান, ইঞ্জিন আর মালগাড়ি চালিয়েই অজিতবাবুরা ব্রডগেজ চালু করার কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল আগেই বলেছিল, রাজধানী-শতাব্দীর মত ট্রেনও এই রুটে চলবে। যে রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, পাহাড়ে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে সেগুলি চলতে পারবে। ফলে মালগাড়ি চালিয়েছে বলেই আদালতের নির্দেশ মানা হয়েছে, সে কথা বলা যায় না।