Rail Budget

জনমোহিনী নয়, সুরক্ষিত পথে ট্রেন চালানোই লক্ষ্য মন্ত্রকের

রেলমন্ত্রকের বরাবরই দাবি, সড়কের থেকে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। কিন্তু রেল যা-ই দাবি করুক না কেন, গত তিন বছরে এ দেশে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬৭০-এর কাছাকাছি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:২৮
Share:

হতে পারে সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বছর ঘুরলেই ভোট। তবু জনমোহিনী পথ ছেড়ে আপাতত মন্ত্রকের পাখির চোখ হল সুরক্ষা। কী করে রেলকে সুরক্ষিত ভাবে চালানো যায় সেটাই এখন মন্ত্রকের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

রেলমন্ত্রকের বরাবরই দাবি, সড়কের থেকে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। কিন্তু রেল যা-ই দাবি করুক না কেন, গত তিন বছরে এ দেশে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬৭০-এর কাছাকাছি। আর গত আর্থিক বছরে প্রায় ৫২টি রেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’শো জন যাত্রী। মারা গিয়েছেন ৬০-এর কাছাকাছি। পুরনো কামরা, পুরনো লাইন, মান্ধাতার আমলের সিগন্যালিং ব্যবস্থার কারণে ওই দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। রেল দুর্ঘটনার পাশাপাশি মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন রোড স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ২২ জন। সব মিলিয়ে রেলের সুরক্ষাব্যবস্থার যে সার্বিক খোলনলচে বদলানো দরকার তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রককে জানিয়েছে রেলমন্ত্রক।

সূত্রের খবর, রেলের দাবি মেনে সুরক্ষা খাতে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ভাবছে অর্থমন্ত্রক। সেই টাকা টিকিটে সেসের মাধ্যমে তোলা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কারণ একে এই বছরে পাঁচ থেকে ছ’টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তারপর বছর গড়ালেই রয়েছে লোকসভা বৈতরণী। ফলে সামান্য সেস বসানোর ঝুঁকি সরকার এখন নেয় কি না তা এখন দেখার। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা রুখতে ইসরোর স্যাটেলাইটের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মূলত প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাতে নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচল করতে পারে তার জন্য ওই সাহায্য নেওয়া হবে।

Advertisement

রেলমন্ত্রকও স্বীকার করে নিচ্ছে, বছরের পর বছর অবহেলার কারণে সুরক্ষা খাতে দ্রুত বিনিয়োগ প্রয়োজন। খোদ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কথায়, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হল যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। তার জন্য প্রয়োজনে ধীর গতিতে ট্রেন চালাতে হলেও চালাব।’’ কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে এই কাজের জন্য বাড়তি অর্থসাহায্য না পেলে তা করা অসম্ভব তা স্বীকার করে নিয়েছে রেলমন্ত্রক।

পাশাপাশি, রেলের পক্ষ থেকে আগামী আর্থিক বছরে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার লাইন বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে কাজের জন্য আলাদা করে ১৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে অরুণ জেটলির কাছে। কারণ, আপতত বুলেট ট্রেনের স্বপ্নকে দূরে সরিয়ে রেখে বর্তমান দূরপাল্লার লাইনে ১৬০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছোটাতে চায় রেল। গাড়ি সেই গতিতে ছুটতে গেলে লাইনের আমূল খোলনলচে বদল হওয়ার প্রয়োজন। প্রাথমিক ভাবে তাই ঠিক হয়েছে, দেশে যে পাঁচটি সেমি হাইস্পিড করিডর রয়েছে সেগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হবে সবার আগে। লাইন বদল করার পাশাপাশি বদলে ফেলা হবে সিগন্যালিং সিস্টেমও।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে চাকরির বিষয়টি বিরোধীদের প্রচারের বড় হাতিয়ার হতে চলেছে। সেই কারণে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় ভোটমুখী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ের রেলের কামরা ও যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা ঘোষণা হতে পারে। সরকারের লক্ষ্যই হবে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় কী ভাবে রোজগার তৈরি হতে চলেছে সেই চিত্র তুলে ধরা। একই সঙ্গে রেলের নিরাপত্তাজনিত পদগুলিতে যে দেড় লক্ষ খালি পদ রয়েছে সেগুলিও ভরার কথা বলে চাকরি প্রশ্নে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মোদী-জেটলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন