আদালতের নির্দেশে ফের খুশির ছোঁয়া বিহারের সুরাপ্রেমীদের মনে। আজ বিহার সরকারের মদ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে ‘সংবিধান-বিরোধী’ অ্যাখ্যা দিয়েছে পটনা হাইকোর্ট। ফলে আজ থেকে রাজ্যে মদ খেতে বাধা নেই।
৫ এপ্রিল বিহার সরকার রাজ্য জুড়ে মদ খাওয়া, রাখা ও বিক্রি করার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার প্রেক্ষিতেই ২০ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন মদ বিক্রেতা ও উৎপাদকদের কয়েকটি সংগঠন ও প্রাক্তন সেনা অফিসাররা। সেই মামলাতেই এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিধানসভায় বিহার আবগারি অধিনিয়ম ১৯১৫ পরিবর্তন করে রাজ্য জুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আদালত সেই পরিবর্তনকে সংবিধানের ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ বলে ঘোষণা করেছে। আদালতের মতে, ওই আইনের ১৯(৪) ধারা সংবিধান-বিরোধী। কারণ তা মানুষের জীবনযাপনের অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপের সামিল। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ২ অক্টোবর থেকে রাজ্য সরকার মদ নিষেধের জন্য যে নতুন আইন আনতে চলেছে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন আইন আনা হবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যাওয়া নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
সরকারি সূত্রের মতে, এখন বিহারে মদ খেতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু মদের দোকান খোলা যাবে না। কারণ, তাদের লাইসেন্স বাতিল করেছিল রাজ্য। সেই লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণ না হলে দোকান খোলা সম্ভব নয়।
আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী ওয়াই ভি গিরি এ দিন বলেন, ‘‘আমরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রথম দিন থেকেই আমরা বলছিলাম বিহার সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ১৪ এবং ২১ অনুচ্ছেদের বিরোধী।’’ তবে সরকারি পক্ষের আইনজীবী ললিত কিশোর এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আদালতের এই নির্দেশে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে গিয়েছে বিহার সরকার। দিন দুয়েক আগে দলের প্রায় ৪০ লক্ষ কর্মী-সমর্থককে মদ নিষেধের পক্ষে প্রচার করার জন্য নির্দেশ দেন নীতীশ কুমার। বিহার ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে মদ নিষেধের পক্ষে প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি।
আগামী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মদ নিষেধকে সামনে রেখেই প্রচার করার পরিকল্পনাও করেছিলেন জেডিইউয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি। পটনায় একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাতে আলো নিভিয়ে ফলের রস খান। তাতেই নেশা হয়েছে মনে করুন।’’ নীতীশের এই বক্তব্যকে ‘তালিবানি’ অ্যাখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরে রাজ্যে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলগুলির অবস্থা দুর্বিষহ।