হিবা নিসার। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দেশের সর্বকনিষ্ঠ ‘পেলেট গান ভিক্টিমে’র বয়স এখন ২৪ মাস।
গত ১৩ মার্চ সদ্য তার দু’বছরের জন্মদিন গিয়েছে। তবে মেয়ের জন্মদিনের আনন্দের চেয়ে মায়ের মনে অনেক বেশি বিঁধে রয়েছে ছররার ক্ষত।
হিবা নিসার। গত বছরের ২৫ নভেম্বর কাপরিন শোপিয়ান গ্রামে সেনার ছররায় বিদ্ধ হয় তার ডান চোখ। তার পর দু’বার হিবার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বার করা হয়েছে ছররা। এখন প্রতি সপ্তাহে এক বার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় হিবাকে। আগামী ৯ এপ্রিল তৃতীয় অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য তারিখ।
তবে তার পরেও শিশুটি ডান চোখে দেখতে পাবে কি না, তা নিয়ে এখনও আশার আলো দেখাতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। বাবা নিসার আহমেদ ভাটের আক্ষেপ— ‘‘মেরা বেটি তো মাসুম হ্যায়! উসকে আঁখকে পেলেট লাগ গ্যয়ি, বড়া দুখ হ্যায়। ও তো কাউকে পাথর ছোঁড়েনি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নিসার এবং মারসেলার দুই সন্তান। হিবা ছোট। বড় ছেলের বয়স এখন পাঁচ। গ্রামের বাড়ি থেকে মা, ২৬ বছরের মারসেলা জানান, ওই দিন ঘরের মধ্যেই মেয়েকে নিয়ে ছিলেন তিনি। সেই সময়ে বাইরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনার সংঘর্ষ চলছিল। হঠাৎই টিয়ার গ্যাসের একটি শেল ঘরে ঢুকে আসে। তার ঝাঁজে দেড় বছরের হিবা বমি করতে শুরু করে। সেই সময়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন মারসেলা। ঠিক তখনই পাথর ছোড়া বিক্ষোভকারীদের থামাতে চালানো ছররা এসে ঢুকে যায় হিবার চোখে। দু’টি ছররা ঢোকে মারসেলার হাতেও।
বাবা নিসার শনিবার ফোনে বলেন, ‘‘হিবার ডান চোখে যে দৃষ্টিশক্তি নেই, বাইরে থেকে দেখলে তা বোঝা যাবে না। ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ায় এখন পট্টিও খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেয়ে চোখে দেখতে পাচ্ছে কি না বোঝার জন্য ওর বাঁ চোখটা পুরো ঢেকে দিয়ে দেখেছি। ও কিছু দেখতেই পাচ্ছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যাতায়াত, ওষুধ, চিকিৎসা সব মিলিয়ে হাজার পঞ্চাশের মতো টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। আমি সামান্য কৃষক। তা-ও মেয়ের চিকিৎসার জন্য যা করতে হয়, করব।’’ নিসার জানান, ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা সরকার থেকে দেওয়া হয়েছিল হিবাকে। সে টাকা তাঁরা খরচ করেননি। হিবার অ্যাকাউন্টেই রাখা আছে।
আর কাশ্মীরি, ভাঙা হিন্দি মিশিয়ে মা মারসেলা বলেন, ‘‘আমার আশা, মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার অথবা বড় কোনও অফিসার তৈরি করব। যাতে অন্য মানুষের দেখাশোনা করতে পারে।’’