শেল ফেটে মারা যায় ১০ বছরের উজেইর মুস্তাক। নিজস্ব চিত্র
শেল ফেটে কুলগামে ছ’জন নাগরিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে স্তব্ধ রইল কাশ্মীর। হরতালের ডাক বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দিলেও সমর্থন করেছে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংগঠনও। ফলে আজ হরতালে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সমর্থন রইল কার্যত গোটা কাশ্মীরি সমাজেরই। এ দিন কাশ্মীরে ‘নিরীহ মানুষে’র হত্যার সমালোচনা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
গত কাল কাশ্মীরে তিনটি সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, কুলগামের লারুতে সংঘর্ষের পরে নিষেধ না মেনে ঘটনাস্থলে যান লারু ও তার পাশের একটি গ্রামের বাসিন্দারা। যে বাড়িটিতে জঙ্গিরা লুকিয়েছিল সংঘর্ষের পরে সেটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তখনই সেখানে পড়ে থাকা একটি শেল ফেটে যায়। তাতে ছ’জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে ১০ বছরের বালক উজেইর মুস্তাকও।
এই ঘটনার পরেই দানা বাঁধে ক্ষোভ। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত কনফারেন্স দাবি করে, কুলগামকে বিচ্ছিন্ন করে ‘অকথ্য অত্যাচার’ চালাচ্ছে ভারতীয় বাহিনী। হরতালের ডাকও দেয় তারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বন্ধকে সমর্থন করে উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংগঠন ‘কাশ্মীর পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতি’ও। তারা জানিয়ে দেয়, শেল ফেটে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
আজ শ্রীনগর-সহ গোটা উপত্যকার চেহারা ছিল কার্ফুর কবলে থাকা এলাকার মতোই। দিনভর বাড়ি থেকে বেরোননি বাসিন্দারা। বিক্ষোভের সম্ভাবনা এড়াতে শ্রীনগরের কয়েকটি এলাকায় যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে প্রশাসন। উপত্যকার পাশাপাশি জম্মুর চন্দ্রভাগা উপত্যকা ও পিরপঞ্জল অঞ্চলেও বন্ধ সফল হয়েছে।
শেল ফেটে মৃত্যুতে গত কালই শোকপ্রকাশ করেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কে বিজয় কুমার ও জম্মু-কাশ্মীরের ডিজি দিলবাগ সিংহ। গত কাল পুলওয়ামায় নিহত এসএসবি জওয়ানের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে আজ দিলবাগ বলেন, ‘‘সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থলে যেতে নাগরিকদের বহু বার নিষেধ করা হয়েছে। এমন ঘটনা আমরা একেবারেই চাই না।’’
রাজৌরিতে গত কাল সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় দুই পাকিস্তানি জঙ্গি। এ দিন পাকিস্তানি সেনাকে ওই দুই জঙ্গির দেহ ফেরত নিতে বলেছে ভারতীয় সেনা। পাশাপাশি জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে ফের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে।
কিন্তু তাতে পাকিস্তানের মনোভাব বদলের ইঙ্গিত মেলেনি। আজ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভারতকে বুঝতে হবে যে কাশ্মীর সমস্যা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া প্রস্তাব মেনে ও আলোচনার মাধ্যমেই করা সম্ভব।’’ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘‘পাক প্রধানমন্ত্রীর উচিত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করে নিজেদের ঘর সামলানো। সন্ত্রাসে পাকিস্তানি মদতের কথা এখন গোটা বিশ্ব জানে।’’ একই সঙ্গে এ দিন লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের তরফে একটি ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরে নিহত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার ও হিজবুল কম্যান্ডার মান্নান ওয়ানির জন্য পাকিস্তানের ৩১টি শহরে প্রার্থনাসভার আয়োজন করেছিল হাফিজের সংগঠন। প্রতিটি শহরেই ভারত-বিরোধী ব্যানার-পোস্টার নিয়ে যোগ দেয় হাফিজের সমর্থকেরা। ওই ভিডিয়োয় হাফিজকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কেবল অশিক্ষিত গরিবেরাই জেহাদে যোগ দেন বলে প্রচার করা হয়। মান্নান ওয়ানি সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন।’’