এত কিছু জমা দিয়েও নাম নেই এনআরসি তালিকায়

এনআরসি তালিকায় নাম ওঠেনি কোচবিহার মোয়ামারির বাসিন্দা আর্জিনা বিবির। পনেরো বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে অসমের ধুবুরি জেলার গড়েরহাটে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ ও নীহার বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩১
Share:

ছবি: এএফপি।

বোধনের এখনও মাসখানেক বাকি। কোচবিহার শহরের বিবেকানন্দ স্ট্রিটে চন্দনা সেনগুপ্তর পিসির বাড়িতে তার আগেই যেন বিসর্জনের বাদ্যি। বাবার মৃত্যুর পর চন্দনা পিসির বাড়িতে অনেক দিন কাটিয়েছেন। ৩৪ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় অসমের গোঁসাইগাওতে। শনিবার অসমে যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হয়েছে, তাতে নেই চন্দনাদেবীর নাম।

Advertisement

খুবই উদ্বিগ্ন পিসি অনিতা সরকার ও তাঁর ছেলেমেয়েরা। অনিতাদেবী বলেন, ‘‘ছোটবেলায় ওর বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের এখানেই থেকেছে। এক কথায় চন্দনা আমারই মেয়ে।’’ চন্দনার পিসতুতো ভাই, অনিতার ছেলে বাপি জানালেন, ‘‘সমস্ত কাগজপত্র জোগাড় করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এমন হলে কি ভাল থাকা যায়?’’

বাপিই জানান, চন্দনার বাবা কানু শ্যামরায় কোচবিহার কলেজে চাকরি করতেন। ১৯৬৯ সালের সেই চাকরি সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে বলে বাপির দাবি। বাপি বলেন, ‘‘অনেক খুঁজে বাপ-ঠাকুরদার ভিটে সংক্রান্ত কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে।’’ সবাই অপেক্ষায়, ৭ সেপ্টেম্বরের পরে আর একবার নথি জমা দেওয়ার সুযোগ যদি মেলে!

Advertisement

এনআরসি তালিকায় নাম ওঠেনি কোচবিহার মোয়ামারির বাসিন্দা আর্জিনা বিবির। পনেরো বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে অসমের ধুবুরি জেলার গড়েরহাটে। তাঁর বাবা আব্দুল আজিজ জানান, ১৯৪৬ সালের জমির দলিল রয়েছে তাঁর বাবা ও দাদুর নামে। সেই কাগজ নথি হিসেবে জমা দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় যে নাম রয়েছে, সেই নথিও জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এত কিছু প্রমাণ দেওয়ার পরেও মেয়ের নাম উঠল না ।”

বালুরঘাট থেকে অসমে যাওয়া পোদ্দার পরিবারও হতাশ। ফোনের কলার টিউনে গান সেট করা আছে ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচার করেছেন তাঁরা। এখন রাতের ঘুম উড়েছে।

অসমের ধুবুরি জেলার বিরাশি পাড়ার বাসিন্দা দুর্লভ পোদ্দার, সমর পোদ্দার, স্বদেশ পোদ্দার ও বিমল পোদ্দার। ওঁদের দাবি, অসমে প্রায় ৫২ বছর ধরে বসবাস করছেন। সবারই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, ১৯৭৮ সালের জমির দলিল— সবই রয়েছে বলে জানালেন তাঁরা। কিন্তু মায়ের কাগজপত্র খুঁজতে নাজেহাল তাঁরা।

সমরের মা ঊষারানি সাহা বালুরঘাটের খিদিরপুরের বাসিন্দা ছিলেন বলে তাঁদের দাবি। খিদিরপুরেই তাঁর মায়ের বিয়ে হয়। সমরদের জন্ম খিদিরপুরে হলেও খুব ছোটবেলাতেই মায়ের সঙ্গে সপরিবার অসমে চলে যান। স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া না করায় স্কুলের শংসাপত্র নেই সমরদের কাছে। তাঁদের মা হয়তো স্কুলে পড়ে থাকবেন, এই আশায় খিদিরপুরের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে হন্যে হয়ে খুঁজছেন মায়ের সার্টিফিকেট। মায়ের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারায় তাঁদের ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম মিলিয়ে মোট ২৫ জনের নাম ওঠেনি চূড়ান্ত তালিকায়।

অসম থেকে ফোনে সমরের ছেলে সঞ্জয় পোদ্দার বলেন, ‘‘ভোটার কার্ড, জমির দলিল সব থাকা সত্ত্বেও নাম ওঠেনি। জানি না কপালে কী আছে। আমার চার ভাই, আমাদের ছেলেমেয়ে ও তাদের পরিবারের কারও নাম নেই চূড়ান্ত তালিকায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement