ভোগান্তি চলল আজও। দিল্লির একটি ব্যাঙ্কের বাইরে গ্রাহকদের লম্বা লাইন। ছবি: পিটিআই।
নীতি আয়োগের উপদেষ্টা পদ থেকে অবসর নিয়েছেন সদ্য। নোট বাতিলের তিন দিন পর সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে সেই নীতি আয়োগের চৌহদ্দির মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে পৌঁছে গিয়েছেন অমিতাভ রায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ঢিল ছোড়া দূরে। দীর্ঘ লাইন যত এগোচ্ছে, শুনতে পেয়েছেন আর দশ হাজার টাকা নয়, দেওয়া হবে মাত্র ২ হাজার টাকা। বেলা দুটোর সময় ব্যাঙ্কের দরজায় যখন পৌঁছলেন, ঘোষণা হল টাকা শেষ।
টাকা তুলবেন কোথা থেকে? রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্র পার্লামেন্ট স্ট্রিটের একটি এটিএমেও টাকা নেই। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরই যখন তাঁর অফিস পাড়াতে এই দশা, বাকি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে, তা বোধগম্য না হওয়ার কারণ নেই।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল, প্রথম দুই-একদিন ভিড় থাকবে। ধীরে ধীরে সেটি পাতলা হতে শুরু হবে। স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি। সরকার এমনটিই অভয়বাণী দিয়েছিল। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে, ততই উষ্মা বাড়ছে মানুষের। হাজারো ভোগান্তি মাথায় নিয়ে যে সাধারণ মানুষ গোড়ার দিকে নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন, আজ তাঁদের মধ্যেই বাড়ছে উষ্মা।
সেই উষ্মা ধীরে ধীরে অসন্তোষের আকার নিতে পারে, সেটি বুঝেই আজ ফের সামনে এলেন খোদ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু অভয়বাণীর দেওয়ার থেকে আরও বেশি আশঙ্কার কথা শুনিয়ে দিলেন তিনি। স্পষ্ট বললেন, নতুন ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোট ধরার জন্য দেশের দু’লক্ষ এটিএম এখনও তৈরিই নয়। কম করে প্রতিটি এটিএম মেশিনে গিয়ে নতুন নোট ধারণের উপযোগী করে তুলতে এখনও সময় লেগে যাবে ২-৩ সপ্তাহ। শুধুমাত্র পুরনো ১০০ টাকার নোটই এখন এটিএম গুলিতে পাওয়া যাবে। অথচ তারও পর্যাপ্ত যোগান নেই।
ব্যাঙ্কগুলির কাছে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত নগদের যোগান না থাকায় দশ হাজারের বদলে ২ হাজার টাকা, কোথাও আরও কম দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ না থাকলেও ব্যাঙ্কগুলি একবার ৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার পর আর সেই গ্রাহককে টাকা দিচ্ছে না। শনি-রবি ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও নগদের যোগান না থাকায় হাত তুলে দিচ্ছে তারা। তার উপর নতুন ৫০০ টাকা এখনও বাজারেই আনতে পারেনি সরকার। কবে হবে, তারও কোনও সুনির্দিষ্ট দিন আজও জানাতে পারেনি অর্থমন্ত্রকের কর্তারা। ২ হাজার বড় নোট হাতে পেয়ে যাঁরা প্রাথমিক আনন্দ পেয়েছিলেন, সেই টাকা বাজারে ভাঙ্গাতে গিয়েও পদে পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রকের এক কর্তা আজ কবুল করলেন, ‘‘এত বড় দেশ। এত বড় একটি বদল। ভোগান্তি তো থাকবেই।’’ আরও মাস খানেকের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ তাঁরাও দেখছেন না।
জেটলি বলেন, ‘‘নতুন নোটের আকার, ওজন পুরনো নোটের থেকে আলাদা। পুরো সিদ্ধান্তের গোপনীয়তা বজায় রাখার কারণেই এটিএম মেশিনগুলিকে আগেভাগে নতুন নোটের উপযোগী করে তোলা যায়নি। করলে গোটা প্রক্রিয়াটিই জানাজানি হয়ে যেত।’’ কিন্তু ব্যাঙ্কের মারফত কোটি কোটি আম-জনতা যে সুফল পাচ্ছেন, সেই ছবিটি তুলে ধরার জন্য আজ সাংবাদিক সম্মেলনে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্যকে নিয়ে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাঁকে পাশে রেখে জেটলি পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ৫০০ ও হাজার টাকার নোট মিলিয়ে বাজারে প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। আজ বেলা সোয়া বারোটার মধ্যে মাত্র আড়াই দিনে বাজার থেকে ব্যাঙ্কে ইতিমধ্যেই দুই-আড়াই লক্ষ কোটি টাকা চলে এসেছে।
জেটলির হিসেবটি কী রকম?
অর্থমন্ত্রীর মতে, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পাঁচ ধরণের পরিষেবা হয়। নগদ জমা, টাকা তুলে নেওয়া, পুরনো নোট বদল করা, এটিএমের মাধ্যমে টাকা তোলা আর এটিএম মেশিনে নগদ জমা দেওয়া। দেশের গোটা ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় ২০-২৫ শতাংশ কাজ করে এসবিআই। মাত্র গত আড়াই দিনে এসবিআই ২ কোটি ২৮ লক্ষ লেনেদেন করেছে। সব ব্যাঙ্ক মিলিয়ে আরও ৪-৫ গুণ হবে। সব মিলিয়ে এসবিআই-তে জমা হয়েছে ৪৭,৮৬৮ কোটি টাকা। সব ব্যাঙ্ক মিলিয়ে অঙ্কটি হবে ২ থেকে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা। সেই অর্থে সরকারি হিসেবে বাজারের সব ৫০০ ও হাজার টাকার নোট যদি ব্যাঙ্কে আসে, তাহলে আরও ১২ লক্ষ কোটি টাকা আসা বাকি। ফলে আগামী দিনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যে কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।
আরও পড়ুন:
ব্যাঙ্কই নেই, নোট বদলাবে কোথায় মানুষ! নাভিশ্বাস উত্তর-পূর্বে