চিন-বিবৃতির মানচিত্রে গলদ, বিপাকে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে আমদাবাদে তাঁর উপস্থিতিতে বেজিংয়ের সঙ্গে তিনটি চুক্তি সই করেছিল গুজরাত সরকার। সেই চুক্তি নিয়েও এ বার নতুন বিতর্কের মুখে পড়ল কেন্দ্র। আমদাবাদে দু’দেশের ওই মউ সইয়ের পরে গুজরাত সরকারের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জে পান্ডিয়ান। যে বিবৃতিতে ছাপা ভারতের মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে দেখানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে আমদাবাদে তাঁর উপস্থিতিতে বেজিংয়ের সঙ্গে তিনটি চুক্তি সই করেছিল গুজরাত সরকার। সেই চুক্তি নিয়েও এ বার নতুন বিতর্কের মুখে পড়ল কেন্দ্র।

Advertisement

আমদাবাদে দু’দেশের ওই মউ সইয়ের পরে গুজরাত সরকারের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জে পান্ডিয়ান। যে বিবৃতিতে ছাপা ভারতের মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার আকসাই চিনকে চিনের অংশ বলে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টি নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। এই বিষয়ে দু’টি প্রশ্ন তুলেছে তারা। প্রথমত, সরকারি বিবৃতির মতোই মউ-এর কাগজপত্রেও কি অরুণাচল এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল বলে দেখানো হয়েছে? কংগ্রেসের দাবি, সেই মউ-এর প্রতিলিপি অবিলম্বে সরকারকে প্রকাশ করতে হবে। কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রশ্ন, অরুণাচলকে বিতর্কিত এলাকা হিসেবে মানচিত্রে দেখিয়ে কি চিনফিংকে খুশি করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

Advertisement

গুজরাত সরকারের বিবৃতিতে যে মানচিত্র রয়েছে, তাতে অরুণাচল সীমান্ত ‘ডটেড লাইন’ দিয়ে আঁকা রয়েছে। অর্থাৎ অরুণাচলের সীমান্ত নিরবচ্ছিন্ন রেখা দিয়ে নির্দিষ্ট করা নেই। একই ভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তও দেখানো হয়েছে। বিপরীতে আকসাই চিনকে নিরবচ্ছিন্ন রেখা দিয়ে চিনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে।

অরুণাচলের কংগ্রেস সাংসদ নিনং এরিং জানান, এ বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন। অরুণাচলের বাসিন্দাদের নিয়ে দিল্লিতে এ ব্যাপারে বিক্ষোভ দেখানোরও হুমকি দিয়েছে কংগ্রেস। দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই মানচিত্রকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে।

চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং ভারত সফরে আসার আগে থেকেই লাদাখ ও অরুণাচলে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। লাদাখে এখনও ভারতীয় এলাকা ছেড়ে যায়নি চিনা সেনা। এই পরিস্থিতিতে গুজরাত সরকারের প্রকাশিত মানচিত্রে গলদ থাকায় বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।

আজ দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “লোকসভা ভোটের সময়ে অরুণাচলে মোদী বলেছিলেন তিনি ভারতের মাথা নিচু হতে দেবেন না। ভারতের এক ইঞ্চি জমিও দেবেন না। সেটা যে স্রেফ কথার কথা তা বোঝা যাচ্ছে।” সিঙ্ঘভির দাবি, বেজিংকে খুশি করার জন্য মানচিত্র বিকৃত করতেই পারে গুজরাত ও কেন্দ্রীয় সরকার। গুজরাতে বিনিয়োগ টানতে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে বন্ধক রাখতে পারে তারা।

বিজেপি-র দাবি, যা ঘটেছে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ছাড়া কিছু নয়। অরুণাচল বা জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হয়নি। দলের অন্যতম নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ার প্রশ্ন নেই। কংগ্রেস হতাশায় ভুগে খামোখা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।” বিজেপি নেতৃত্বের এও দাবি, সীমান্তে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ার ফলেই ভারত-চিন মিডিয়া প্রতিনিধিদের বৈঠক বাতিল হয়েছে।

তবে মানচিত্র বিতর্ক নিয়ে গুজরাত সরকার বা বিদেশ মন্ত্রক এখনও কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন