গত কাল সকালে হঠাৎই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের ফোন বেজে উঠল। অচেনা নম্বর দেখে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ভাবেই ফোন ধরেন তিনি। ওপার থেকে ভেসে আসে পরিচিত গলা, ‘‘আরে দাস, ঝাড়খণ্ডকে ক্যাশলেস করার কাজ কত দূর এগোল?’’ আর ওই এক প্রশ্নেই উজ্জীবিত দাস! কারণ ওপারের গলাটি যে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর।
গত কালের ঘটনা আজ নিজেই জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে কাজের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলেন। আমি বলেছি, কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।’’ এবং এর পরেই আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলার অন্তত একটি করে ব্লককে ক্যাশলেস করার কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে এক একটি ব্লককে ক্যাশলেস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাঁচীর নগরী ব্লককে রাজ্যের প্রথম ‘ক্যাশলেস ব্লক’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তারও প্রস্তুতি চলছে। রঘুবরের মতে, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত ঝাড়খণ্ড তৈরি করতে যতটা সম্ভব ক্যাশলেস লেনদেন হওয়া খুবই জরুরি।’’ আজ থেকে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে এই ‘ক্যাশলেস’ প্রচার।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ঝাড়খণ্ডের গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কই ঠিক মতো কাজ করে না, সেখানে ক্যাশলেস লেনদেন হবে কী ভাবে? আম-আদমি কী ভাবে এই প্রক্রিয়ায় সামিল হবেন? সরকারি এক কর্তার কথায়, তড়িঘড়ি পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারি আধিকারিক, হাসপাতালের কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সাধারণ মানুষ, কলেজ ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। রাঁচীর ডিএসপি-সদর বিকাশ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনে কী ভাবে ক্যাশলেস লেনদেন করব, তা শেখানো হয়েছে। তেমনই অফিসের বিভিন্ন কাজ কী ভাবে ক্যাশলেস করা যায়, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।’’
তিনি জানান, এমনকী রাঁচীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশও ‘সোয়াইপ মেশিন’ রাখবে। জরিমানার টাকা কার্ডেও মেটাতে পারবে আইনভঙ্গকারীরা। এ ছাড়াও, গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ব্যাঙ্কগুলিকে এই প্রক্রিয়ায় সামিল করেছে সরকার। চিহ্নিত ব্লকগুলিতে সাধারণ আমানতকারীদের হাতে ডেবিট কার্ড পৌঁছতে ব্যাঙ্কের সঙ্গে জেলা প্রশাসনও সামিল হয়েছে।
কিন্তু এত দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে?
আশাবাদী রঘুবর মন্ত্রিসভার খাদ্যমন্ত্রী সরযূ রায়। অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেনে যে দুর্নীতি অনেকটা কমে যায় তা হাতেনাতে টের পেয়েছেন বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘এখন বেশ কয়েকটি জেলায় রেশন কারা পাচ্ছেন না পাচ্ছেন, বা কী পাচ্ছেন তার হিসেব অনলাইনের মাধ্যমেই করা হচ্ছে। এর ফলে ভুয়ো রেশন কার্ড যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই রেশনের মাল নিয়ে দুর্নীতিও প্রায় শেষ।’’ সরযূবাবুর মতে, ‘‘নতুন কিছু গ্রহণ করতে মানুষের প্রথমে একটু ভোগান্তি হবেই। কিন্তু আখেরে লাভ হবে সাধারণ মানুষেরই।’’