বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ুক, চান প্রধানমন্ত্রী

চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে সম্পর্ককে আরও স্বচ্ছ এবং বাণিজ্যমুখী করতে চায় নতুন সরকার। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে চিনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই সেই প্রয়াস শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এর আগেও বেজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক বৈঠক হয়েছে। গত মাসে সে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এসেছেন। কিন্তু ব্রাজিল সফরে গিয়ে ব্রিকস-এর পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক এই প্রথম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪২
Share:

চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। ব্রাজিলে। ছবি: পিটিআই

চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে সম্পর্ককে আরও স্বচ্ছ এবং বাণিজ্যমুখী করতে চায় নতুন সরকার। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে চিনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই সেই প্রয়াস শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এর আগেও বেজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক বৈঠক হয়েছে। গত মাসে সে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এসেছেন। কিন্তু ব্রাজিল সফরে গিয়ে ব্রিকস-এর পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক এই প্রথম। ঠিক ছিল বৈঠকটি হবে ৪০ মিনিট। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট মোদী কথা বলেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর সঙ্গে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ই আলোচনায় এসেছে। কোনও রাখঢাক না করেই সহমত ও ভিন্নমত দুই ধরনের বিষয় নিয়েই খোলাখুলি আলোচনা করেছেন দুই নেতা।

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দু’টি দেশই জোর দিয়েছে। সীমান্তে পারস্পরিক আস্থা এবং সুস্থিতি বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আজ ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেছেন, ভারত এবং চিন শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে পারলে তা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।”

Advertisement

চিন-নীতি রূপায়ণের প্রশ্নে গোড়া থেকেই আবেগে ভাসতে চাননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। বরং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলার কথাই বলছেন তিনি। পাশাপাশি বেজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানোও লক্ষ্য তাঁর। বৈঠকে ভারত ঠিক এই অবস্থানেই অনড় থেকেছে। এক দিকে বৈঠকের পর মোদী টুইট করে বলেছেন, “চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খুব ভাল আলোচনা হয়েছে।” পাশাপাশি সি জিনপিং-ও বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি রূপায়নের প্রশ্নে ভারত ও চিন হাতে হাত মিলিয়ে চলবে। আগামী নভেম্বরে বেজিং-এ অ্যাপেক (এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন)-ভুক্ত দেশগুলির বাণিজ্য সম্মেলনে মোদীকে উপস্থিত থাকার জন্য আজ ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সি। এই বার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ, কেন না এর আগে অ্যাপেক-এর কোনও বৈঠকেই ভারত ডাক পায়নি। দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাপেক-এর সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। চিনের এই আমন্ত্রণ স্বীকার করেছেন মোদী। তবে তিনি নিজে উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। কিন্তু এই আমন্ত্রণকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগ টানার যে সুযোগ সামনে এসেছে, তাকে অবশ্যই কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন মোদী।

পারস্পরিক সহযোগিতার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং দ্বৈরথের সুরটিও কিন্তু প্রচ্ছন্ন থাকেনি গত কালের ভারত-চিন বৈঠকে। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রস্তাবিত ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সদর দফতর কোথায় হবে, তা নিয়ে কিছুটা দড়ি টানাটানি চলছে ভারত এবং চিনের মধ্যে। দু’টি দেশই গোড়া থেকে চেষ্টা করে আসছে সদর দফতরটি নিজ দেশে রাখতে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ জানিয়েছেন, “দিল্লি বা ভারতের কোনও শহরের অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ কর্মী পাওয়া এখানে সহজ। ভৌগলিক ভাবে দেখতে হলেও ব্রিকস-এর পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারতই কৌশলগত ভাবে সব চেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে।”

চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। অনেকে মনে করেন, আমেরিকার সঙ্গে তাঁর শীতল সম্পর্কের কারণেই বেজিং একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে মোদীকে। একাধিক বার মোদী গিয়েছেন চিনে। ব্যক্তিগত সখ্য যে কূটনীতিতে বড় ভূমিকা নেয়, সেটা নতুন নয়। এ বার ব্রিকস অভিযানে ব্রাজিল গিয়ে এই গোষ্ঠীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দেশ চিনের সঙ্গে তা কতটা কাজে লাগাতে পারেন মোদী, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন