Narendra Modi

ভয় পাই না, ‘শোলে’র ধাঁচে বার্তা মোদীর

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আজ রায়পুরের জনসভাকে খুব উঁচু তারে বাঁধার চেষ্টা করেছেন মোদী। কারণ ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম তিনি ছত্তীসগঢ়ে পা দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৬:১২
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

ভোটমুখী রাজ্য ছত্তীসগঢ়ে আজ ফিরে এল ‘শোলে’ ছবির সেই প্রখ্যাত সংলাপের স্মৃতি, রাজনৈতিক আবহে। যার কেন্দ্রে সেই বক্তা, যাঁর নাটকীয় বাগ্মিতা নিয়ে প্রচার হয়েছে অনেক। রূপোলি পর্দায় ওই সংলাপটি ছিল, ‘যো ডর গ্যায়া, সমঝো মর গ্যায়া’। তবে সেই সংলাপ ছিল গব্বরের। আজ রায়পুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসকেই কার্যত খলনায়কের ভুমিকায় বসালেন করলেন তাঁর বাকপটুতায়। জানালেন, ‘যো ডর যায়ে উয়ো মোদী নেহি।’

Advertisement

এ ভাবেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আজ ছত্তীসগড়ের রায়পুরে ৭,৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করে কার্যত ভোটের প্রচার শুরু করলেন বিজেপির এই তারকা প্রচারক। এর পরেই তিনি যান গোরক্ষপুর হয়ে বারাণসী। দুটি বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনা ছাড়াও অসংখ্য প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন উত্তরপ্রদেশে।

মোদীর এই ‘ভয়কে জয় করার’ ভিডিয়ো তুলে ধরে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একের পর এক প্রশ্ন ছুড়েছেন টুইট করে। তাঁর বক্তব্য, “তা হলে চিনের ব্যাপারে কেন চুপ? তা হলে মণিপুরের ব্যাপারে কেন চুপ? তা হলে কেন ইডি, সিবিআই-কে ব্যবহার করা হচ্ছে? তাহলে ক্রমশ বেড়ে যাওয়া বেকারিত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চুপ কেন? তা হলে মোদানীর (মোদী ও আদানি) বিষয়ে চুপ কেন?” কংগ্রেসের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে একটি টেবলের নীচে মোদীর বসে থাকার ছবি। উপরে লেখা ‘যিনি খুবই ভয় পান’।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আজ রায়পুরের জনসভাকে খুব উঁচু তারে বাঁধার চেষ্টা করেছেন মোদী। কারণ ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম তিনি ছত্তীসগঢ়ে পা দিলেন। এখানকার মানুষের কাছে তীব্র কংগ্রেস-বিরোধী বার্তা পৌঁছতে তাই সর্বাত্মক প্রয়াস তাঁর। রাজ্যের কংগ্রেস সরকারকে বিঁধে মোদীর হাততালি কুড়োনো বক্তব্য, “যো ডর যায়ে উয়ো মোদী নেহি। ছত্তীসগঢ়ের উন্নয়ন নিয়ে আমি পিছু হটব না। কংগ্রেস গরিবের শত্রু। কংগ্রেস দুর্নীতি ছাড়া শ্বাস নিতে পারে না।” কংগ্রেসের প্রতীক হাত চিহ্নের প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেছেন, “ছত্তীসগঢ়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আগামী ২৫ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উন্নয়নের সেই গতির সামনে বড় পাঁচিলের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বিরাট পাঞ্জা (হাত)। এই পাঞ্জা সব লুঠ করে নিচ্ছে। অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। রাজ্যটাকে শেষ করে দিচ্ছে।” তাঁর কথায়, “হাতে গঙ্গাজল নিয়ে এই কংগ্রেস শপথ করেছিল রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করবে। এমনকি ইস্তাহারে তারা লিখেছিল দশ দিনের মধ্যে তারা এই কাজ করবে। লম্বা, চওড়া সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তাদের এখন স্মৃতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।”

শুক্রবার ও শনিবার, দু’দিনে চার রাজ্য ঘুরে প্রায় পঞ্চাশটি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মোদী। লোকসভা ভোটের আগে আগামী কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশে ঘুরে পাঁচশোর বেশি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। রাজনীতিকদের মতে,, এই তালিকায় এমন অনেক প্রকল্প ঢুকে পড়েছে যার শিলান্যাস করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও যান না। স্থানীয় মন্ত্রী বা প্রশাসনের কর্তারাই সেই দায়িত্ব সেরে ফেলেন।

আজ উত্তরপ্রদেশের মাটি থেকেও এমন কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন সেরে মোদী আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেসকে। ‘পরিবারবাদী’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসাবে বর্ণনা করে মোদী বারবার বলেছেন, ২০১৪ সালের আগে সরকারি প্রকল্পের লাভ গরিব মানুষের কাছে পৌঁছত না। হাতে গোনা মানুষের লাভ হত আর আজ সরকার নিজে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে কমিশন খাওয়া বন্ধ। দুর্নীতি বন্ধ। দালালি বন্ধ।”

আজ গোরক্ষপুরে গীতা প্রেস-এর একশো বছরের উদ্‌যাপনে যোগ দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘এই প্রেস এক মন্দিরের মতো।’’ রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই প্রেসকে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মেরুকরণের এক অস্ত্র বানাতে চাইছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন পুরস্কার কমিটি সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, গান্ধী শান্তি পুরস্কার পাবে গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস। তার পরেই কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, ‘‘এটা একটা প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। (ভি ডি) সাভারকর বা (নাথুরাম) গডসেকে পুরস্কৃত করার সমতুল। কারণ গান্ধীর প্রতি গীতা প্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদর্থক ছিল না। গীতা প্রেসের সঙ্গে হিন্দু মহাসভা এবং আরএসএস-এর সম্পর্কই অনেক ঘনিষ্ঠ।” কংগ্রেসের এই সমালোচনা নিয়ে মোদী কংগ্রেসকে বিঁধেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন