আস্থা ডোভালে

জঙ্গি দমন অভিযানের প্রশংসায় মোদী

অজিত ডোভালের সমালোচনা যতই হোক, তিনি যে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রাখছেন, তা বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার পর আজ সেখানে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী জঙ্গিদের রোখার অভিযানে ডোভাল ও অন্যদের কাজের প্রশংসা করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী। শনিবার।-পিটিআই

অজিত ডোভালের সমালোচনা যতই হোক, তিনি যে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রাখছেন, তা বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার পর আজ সেখানে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী জঙ্গিদের রোখার অভিযানে ডোভাল ও অন্যদের কাজের প্রশংসা করেছেন। পঠানকোট থেকে মোদী টুইট করেছেন, জঙ্গি হামলার জবাবে যে ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার রূপায়ণ হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। পঠানকোটে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মোদী কিন্তু জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় তাঁর নজর কেড়েছে। বাহিনীর জওয়ানদের সাহসেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। আজ সকালে মোদী পঠানকোট পৌঁছনোর পর, ডোভাল, সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ এবং বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা কী ভাবে হামলা রোখা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন। বায়ুসেনা ঘাঁটির যে সব জায়গায় জঙ্গিরা লুকিয়ে ছিল, সেগুলি ঘুরেও দেখেন মোদী। এর পর কপ্টারে করে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন তিনি। এ দিকে দেশের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন এই পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত রাখার জন্য সওয়াল করেছেন। পঠানকোটে জঙ্গি দমনে এনএসজি পাঠানোরও সমালোচনা করেছেন তিনি।

মোদী যখন পাকিস্তানি জঙ্গিদের হামলার পরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ব্যস্ত, তখন ইসলামাবাদে পঠানকোট হামলার তদন্ত নিয়েই বৈঠকে বসেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, নয়াদিল্লির তরফে পঠানকোটে পাকিস্তানি জঙ্গিদের জড়িত থাকার যে তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসলামাবাদ নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই এগোবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সেনা প্রধান রাহিল শরিফ, আইএসআই-এর ডিজি রিজওয়ান আখতারও উপস্থিত ছিলেন। নওয়াজ তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির খান জানজুয়াকে ডোভালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা আফতাব সুলতানকে জোর কদমে তদন্ত করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পাক প্রশাসনের দাবি।

Advertisement

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আগেই বলা হয়েছে, দু’দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের ভাগ্য নির্ভর করছে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কত খানি ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার উপর। পাকিস্তান যাতে পঠানকোটের ষড়যন্ত্রীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে, তার জন্য আমেরিকাও পাক প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি করেছে। ওয়াশিংটন চায়, ভারতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতোই কাজ করে দেখাক পাকিস্তান। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা আজ বলেন, পাকিস্তান পঠানকোটের ষড়যন্ত্রীদের শাস্তি দেওয়ার কথা দিয়েছে। তারা বলেছে, জঙ্গি সংগঠনগুলির মধ্যে ভেদাভেদ করা হবে না। তবে এই কথা মেনে কাজ হয় কি না, তা আমরা দেখতে চাই। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার পরেও অবশ্য একই কথা দিয়েছিল পাকিস্তান। আমেরিকা চায়, এ বার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। পঠানকোট ও আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফের হামলার পরে মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে।

মার্কিন প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলার জন্য পাকিস্তানকে সমরাস্ত্রের জোগান দিয়ে এসেছে বারাক ওবামা সরকার। পাকিস্তানকে আটটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাক প্রশাসন সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠছে। মার্কিন কংগ্রেসে এখন রিপাবলিকানদের সংখ্যাধিক্য। পাকিস্তান হাতে-কলমে কিছু না করলে ওবামার পক্ষেও কংগ্রেসকে বোঝানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ভারতও চাইছে, আমেরিকা পাকিস্তানের উপরে চাপ তৈরি করুক।

তবে যাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এত চাপানউতোর, সেই জইশ-ই-মহম্মদ ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রীতিমতো কৌতুক করেছে। একটি অডিও-ক্লিপ প্রকাশ করে জইশ জঙ্গিরা কার্যত নিজেদের দায় স্বীকার করে নিয়েছে। ছয় জন জেহাদি কী ভাবে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘নাস্তানাবুদ’ করে ভারতের সেনা, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টারে গুলি চালিয়েছে, তার বর্ণনা রয়েছে ওই ক্লিপে। একই সঙ্গে পাকিস্তান কেন ভারতের দেওয়া প্রমাণ নিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জইশ।

অডিও-ক্লিপে জইশের কোনও এক জঙ্গি নেতা বলেছে, প্রথমে ওরা বুঝতে পারেনি পাঁচ জন না ছয় জন জঙ্গি। এনএসজি-র নিরঞ্জন কুমার ও সেনা জওয়ান ফতেহ সিংহকে নিয়ে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘বুরি তরা মারে গ্যয়ে’। জইশ-এর কটাক্ষ, এত বড় দেশ চোখের জল ফেলছে। তার পর ভীতুর মতো অভিযোগের আঙুল তুলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন