বৃহস্পতিবার ভাটনগর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। ছবি: পিটিআই।
উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে তখনও ছাড়ার কথা ঘোষণা করেননি ইমরান খান। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বাতিল করে রাজ্যে রাজ্যে মোমবাতি মিছিলেরও তোড়জোড় শুরু করছিল রাহুল গাঁধীর দল। আর নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্য তখন বুথে বুথে আবেগকে পৌঁছে দেওয়া।
সকালেই কুম্ভ-নগরীতে পাঁচশো বাস চালিয়ে আবু ধাবির রেকর্ড ভাঙছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দিনের শেষে গিনেস রেকর্ডও জুটেছে। আর মোদী একই দিনে এক সঙ্গে এক কোটি কর্মীর সঙ্গে ভিডিয়োর মাধ্যমে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেন। সে অনুষ্ঠানের নাম ‘মেরা বুথ, সবসে মজবুত।’ সেনার আবেগকে ভোটে রূপান্তর করে বুথ জয়ের মন্ত্র দিচ্ছেন বিজেপি কর্মীদের কানে।
প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় সরকারের সাফল্য গাওয়ার পাশাপাশি ব্যাটম্যান থেকে বাহুবলী— অনেকের নামই নিলেন, শুধু অভিনন্দনের নাম করেনি। একবার বলেছেন, ‘‘আমাদের সেনারা সীমান্তে ও সীমান্ত পেরিয়ে পরাক্রম দেখাচ্ছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ব্যাখ্যা, সীমান্ত পেরিয়ে পরাক্রম বলতে মোদী আসলে অভিনন্দনের কথাই বলেছেন।
নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানতেন?
তবে ছাড়ছেন না না বিরোধীরা। রাহুল গাঁধীর নির্দেশে কংগ্রেসও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াল: ‘মেরা জওয়ান সবসে মজবুত’। দলের নেতারা বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলতেন, দল থেকে দেশ বড়। বায়ুসেনা অফিসার এখনও পাকিস্তানের কব্জায়। আর প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কাছে দেশের থেকে দল বড়। কংগ্রেসের কাছে দেশ প্রথম। মোদীর কাছে দল প্রথম। সেনা সামলাচ্ছে দেশ, মোদী সামলাচ্ছেন দল।’’
ঠিক এ কথাটাই গত কাল বিরোধী দলের বৈঠকে রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেছেন। মোদী ও গোটা বিজেপি নেতৃত্ব সেনাকে নিয়ে পুরোদস্তুর রাজনীতি করছেন। তা দিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্যের পরেই অরুণ জেটলির মতো মোদীর সেনাপতিরা রে-রে করে ওঠেন, ভারত থেকে ঐক্যের সুর বাজছে না। লাভ হচ্ছে পাকিস্তানেরই। কিন্তু বিরোধীরা বলছিলেন, মোদী-অমিত শাহেরা রাজনীতি ছাড়া আর করছেনই বা কী? আপাদমস্তক রাজনীতি করে শুধু চেঁচিয়ে বলছেন, ‘করছি না!’
কিন্তু বিজেপির ‘মনের কথা’টি বেরিয়েও পড়ছে। কর্নাটকের বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা সাফ বললেন, মোদী যে ভাবে পাকিস্তানে হামলা করেছেন, তার পর কর্নাটকে ২৮টির মধ্যে ২২টি আসনই পাবে বিজেপি। দিল্লি থেকে ধমক দিয়ে ফোন গেল ইয়েদুরাপ্পার কাছে। মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহও প্রকাশ্যে জবাব দিলেন, ‘‘দুঃখিত ইয়েদুরাপ্পাজি, কিছু বাড়তি আসনের জন্য সেনা কাজ করে না।’’ ধাতানি খেয়ে ইয়েদুরাপ্পাও চেনা বুলি আউড়ালেন— ‘আমার বক্তব্যের ভুল অর্থ করা হয়েছে’।
কিন্তু মোদী যে পাখির চোখ তো ভোটই। সে কথা পাকিস্তানে হামলার দিনেই সোজাসাপটা বলেছেন। আজও বললেন। সকলকে দেশের ‘সৈনিক’ হয়ে লড়তে বললেন। বুথে বুথে। আর অভিনন্দনকে নিয়ে উৎকণ্ঠার আবহেও দিব্য হাসিমুখে বললেন, তাঁর আত্মবিশ্বাসের কোনও খামতি নেই। একই সঙ্গে তুলোধোনা করলেন রাহুল থেকে মমতা-মায়াকে। কখনও পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতির কথা তুলে, কখনও অস্তিত্ব রক্ষায় ‘মহাভেজাল-জোটে’র কথা বলে। এই ফাঁকেই পাঁচ বছরের প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পারার ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছর ছিল মৌলিক বিষয় পূরণের, পরের পাঁচ বছর হবে আকাঙ্ক্ষা পূরণের। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়!’’
কিন্তু অস্বস্তি কী সব সময় বলে কয়ে আসে? দুপুর গড়াতে ইমরান খান নিজেই অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা করে শান্তির বার্তা দিলেন। সন্ধ্যে থেকে বিজেপি ফের বোঝানোর চেষ্টা শুরু করল, এটিও আসলে মোদীরই সাফল্য। অভিনন্দনকে না-ছেড়ে উপায় ছিল ইমরানের?