Narendra Modi

চিন-প্রশ্নে জয়শঙ্করের কড়া অবস্থানের পক্ষেই মোদী

গত এক বছর জয়শঙ্করকে দেখা গিয়েছে, বিদেশনীতির প্রশ্নে ক্রমাগত সামনের পায়ে গিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে। রাজনৈতিক মহলের মতামত, এটি তিনি করছেন মোদীর জাতীয়তাবাদের ঘরোয়া রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:২৯
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

চিন-নীতির প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মধ্যে সম্প্রতি দুই মেরুর বিভাজন দেখা গেল। এক দিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি অংশ। অন্য দিকে গোটা বিদেশ মন্ত্রক এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাজনৈতিক সূত্রে এই তথ্য জানা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জয়শঙ্করের অবস্থানেই সিলমোহর দিয়েছেন। ফলে অন্য অংশের মতামতকে আপাতত গ্রাহ্য করা হচ্ছে না।

Advertisement

সূত্রের দাবি, ডোভাল শিবিরের বক্তব্য ছিল, সেপ্টেম্বরে গোগরা হট স্প্রিং থেকে চিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরেই বিষয়টিকে নিষ্পত্তির সূচক হিসাবে মেনে নেওয়া হোক। মেনে নিয়ে, ভারত-চিন ২০২০ সাল থেকে থমকে থাকা বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের (দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) আলোচনা শুরু করে দেওয়া হোক। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও চাকা আবার গড়াতে থাক। ডোভাল-পক্ষের যুক্তি, ডেপসাং, দৌলতবেগ ওল্ডি-র মতো বিভিন্ন স্থানে যেখানে চিনা সেনা এখনও ভারতীয় ভূখণ্ড (কম-বেশি হাজার দুয়েক বর্গ কিলোমিটার) দখল করে রেখেছে, সেটা অগ্রাহ্য করাই উচিত। তার কারণ, এগুলি মোদী সরকারের জমানার দায় নয়। এখানে সঙ্কট পাকিয়ে উঠেছিল কংগ্রেসের জমানা থেকে। ফলে সেই দায় কেন ঘাড়ে নেওয়া হবে?

অন্য দিকে জয়শঙ্কর স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, সেটা সম্ভব নয়। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, গোগরা, হট স্প্রিং এলাকা থেকে চিনের সেনা সরার বিষয়টি সমস্যার সমাধানের একটি অংশমাত্র। আরও সমস্যা রয়েছে। হট স্পিং ব্যতীত অন্য পোস্টগুলিতে যে চিনা সেনা এখনও এক তরফা ভাবে থানা গেড়ে বসে রয়েছে, তা বারবার আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার করা হয়েছে জয়শঙ্করের নেতৃত্বে। চিনের সঙ্গে সামরিক পর্যায়ের বৈঠকে এই বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, জয়শঙ্করের এই বলিষ্ঠ অবস্থানকে সমর্থন করেছেন মোদী, এমনটাই জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

অন্য দিকে অরণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে চিনা সেনা হামলা করে সীমান্ত নিয়ে আগের মতো সামগ্রিক আলোচনায় বসার জন্য নয়াদিল্লির উপর চাপ আরও বাড়াতে চাইছে বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। উদ্দেশ্য, পশ্চিম সেক্টরে অর্থাৎ লাদাখে এই মুহূর্তের চিনা অবস্থানকে মান্যতা দিয়ে দেওয়া। জয়শঙ্কর সেই ফাঁদে পড়তে যে রাজি নন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সরকারের অন্দরে।

গত এক বছর জয়শঙ্করকে দেখা গিয়েছে, বিদেশনীতির প্রশ্নে ক্রমাগত সামনের পায়ে গিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে। রাজনৈতিক মহলের মতামত, এটি তিনি করছেন মোদীর জাতীয়তাবাদের ঘরোয়া রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই। রাজনৈতিক শিবিরের আরও দাবি, এই অবস্থান নেওয়া বিদেশমন্ত্রীর নিজের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্যও জরুরি ছিল। বছর খানেক আগে বিভিন্ন বিদেশি পত্রপত্রিকায় মোদীর চূড়ান্ত সমালোচনার পরে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অভিযোগ ওঠে, সেই বৈঠকে মোদী সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি মেরামত করা এবং সরকার কী ভাবে কোভিড সামলাচ্ছে, তার ভাষ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশই দেওয়া হয়নি।

সূত্রের মতে, আন্তর্জাতিক মাটিতে তৈরি হওয়া এই মোদী-বিরোধী ভাষ্যের মোকাবিলা নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ভূমিকায় সে দিন ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে বিদেশনীতির প্রশ্নে বাড়তি কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অজিত ডোভালকে। এর আগেও দু’হাজার সালে বিদেশমন্ত্রী যখন পূর্ব লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশের সঙ্কট সামলানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন, তখন হঠাৎ করেই আসরে আনা হয়েছিল ডোভালকে। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে কথা শুরু করেছিলেন তিনি।

কিন্তু গত এক বছর, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যে ভাবে বিদেশনীতি সামলেছেন জয়শঙ্কর, তাতে আস্থা বেড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এক দিকে ভারসাম্যের কূটনীতি বহাল রাখা, অন্য দিকে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমেরিকা এবং ইউরোপের চাপ সামলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার মহাকঠিন কাজটি সামলাচ্ছেন জয়শঙ্কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন