সেকেন্ড লিঙ্ক রোডের বাড়ি থেকে রক্তমাখা বালিশের খোল, বিছানায় পড়ে থাকা সুপারি কাটার যাতি— ৭৯ বছরের শীলা দেব কানুনজ্ঞ ও তাঁর ছেলে সৌমিত্রের খুনের ঘটনায় এই দু’টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশি তদন্ত আর একটুও এগোল না। এতে উদ্বেগে শহরের মানুষ। ২০১২ সালে লিঙ্ক রোডে স্বামী-স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের এ পর্যন্ত কোনও কিনারা না হওয়ায় সাধারণ জনতা এই ঘটনার পর আরও বেশি উৎকণ্ঠায়।
একই সঙ্গে উঠে আসে আগের আরও বেশকটি হত্যাকাণ্ডের কথা। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর সেন্ট্রাল রোডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মায়া লালা নামে এক বৃদ্ধা। কাঠের দো-তলায় থাকতেন তিনি। আচমকা দাউদাউ করা আগুনে ঝলসে গেল তাঁর দেহ। কে বা কারা আগুন লাগাল, কেন খুন করা হল বৃদ্ধাকে, জানা যায়নি আজও। বছর তিনেক আগে মালুগ্রামে দিনদুপুরে এক মহিলা নিজের ঘরে খুন হন। ক-দিন পর তাঁর স্বামীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরও কিনারা হয়নি।
আজ পুলিশ সুপার রজবীর সিংহের দেখা করে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল। তাঁরাও বারবার পুরনো ঘটনাগুলির উল্লেখ করেন। বিশেষ করে, স্বামী-স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বিন্দুমাত্র এগোতে না পারায় তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ জানান, ২০১২ সালে তিনি কাছাড়ে ছিলেন না। ফলে ওই ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন। তবে এই মামলা সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেন। রজবীর জানান, সমস্ত সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখে খুনিদের চিহ্নিত করার কাজে তাঁরা উঠেপড়ে লেগেছেন। জমিদখল, সিবিআই আদালতে মামলা, মদ্যপানের আসরের ঝঞ্জাট---কোনও কিছুকেই খারিজ করছেন না তাঁরা।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, প্রাক্তন সম্পাদক দীপক সেনগুপ্ত, প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি আশিস ভৌমিক, সম্পাদক অজয় রায়, প্রাক্তন সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস, জয়ন্ত দাস, শৈবাল গুপ্ত, বেণুলাল বর্মন ও প্রদীপ নাথ। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জে্লা কংগ্রেস কমিটিও। সাধারণ সম্পাদক পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বাড়ির ভেতর যে-ভাবে মা-ছেলেকে খুন করা হল, তা জেনে শহরবাসী আতঙ্কিত।
কিন্তু কারা খুন করতে সৌমিত্র ও তাঁর মাকে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানান, তাঁরা দু-দিক থেকে বিষয়টিকে দেখছেন। প্রথমত, জমির লোভে যদি কেউ তাঁদের খুন করে থাকে, তবে জোড়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকেছে। আর তা যদি না হয়, তবে ৭৯ বছরের বৃদ্ধাকে কেউ পরিকল্পিত ভাবে খুন করতে চাইবে না। সে ক্ষেত্রে হয়তো সৌমিত্রকে খুন করতেই ঘরে ঢুকেছিল কোনও দুষ্কৃতী বা দুষ্কৃতীদল। শীলাদেবী দেখে ফেলায় তাঁকেও মেরে ফেলা হয়।
শীলা দেব কানুনজ্ঞের মেয়ে জয়শ্রী জানান, এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে, কল্পনার বাইরে। শনিবারও বাড়ির ল্যান্ডফোনে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা হয়। জয়শ্রীদেবী বলেন, ‘‘মা বলছিল, পরিচারিকা হেনা সূত্রধর রাতের রুটি বানিয়ে গিয়েছে।’’