ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ চালু করল বিহার সরকার। পুলিশকে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে পঞ্চায়েত দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করল, ‘কোনও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে এলে প্রথমে পঞ্চায়েত দফতর এবং জেলাশাসককে বিষয়টি জানাতে হবে। সেখান থেকে অনুমতি পেলে তবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারবে পুলিশ।’ বিহারে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ মিলে পাঁচ হাজারেরও বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কারণে-অকারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে হয়রান করার জন্য বহু ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্থানীয় স্তরে শত্রুতা, আক্রোশ থেকেই এই ধরণের অভিযোগ আনা হয়।
ফলে জনপ্রতিনিধিদের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই হয় না। বরং পঞ্চায়েতের কাজই বিঘ্নিত হয়। সেই কারণেই এই বিজ্ঞপ্তি।
পঞ্চায়েতের অধিকর্তা দীপক আনন্দ বলেছেন, “আমাদের দফতরে প্রায়শই পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন যে তাঁদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কাজে অনেক সমস্যা হয়।” সেই কারণেই ঠিক হয়েছে, পুলিশের কাছে আসা দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ প্রথমে জেলাশাসককে জানাতে হবে। তিনি পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের প্রাথমিক কোনও ভিত্তি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবেন। যদি দেখা যায় যে অভিযোগের যথার্থই ভিত্তি রয়েছে তবে পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হবে। তা না হলে অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হবে।
তবে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ, যথা— খুন, অপহরণ, বেআইনি অস্ত্র রাখার মতো কোনও অভিযোগ এলে পুলিশ সরাসরিই তার তদন্ত করবে। তার জন্য কোনও আগাম অনুমতির দরকার হবে না।
পঞ্চায়েত দফতরের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশের মধ্যে খানিকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজিপি পি কে ঠাকুরই এখনও বিষয়টি ভাল মতো জানেন না। তিনি বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত এমন বিজ্ঞপ্তির কথা আমার জানা নেই। তবে সরকার যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তা হলে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
জেলার এক সিনিয়র পুলিশ সুপার বলেছেন, “এই সব জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাই তো বেশি হয়। সরকার যদি এই ক্ষেত্রে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দেয় তাতে তো দুর্নীতি আরও জাঁকিয়ে বসবে।”
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “একশো দিনের কাজ নিয়ে তো ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে দুর্নীতি বেড়ে যাবে বলেই মনে হয়।”