নোটের ঠেলায় প্যাঁচে পড়েছে ভোটের ভবিষ্যৎ

এক লহমায় বদলে গিয়েছে সেন্ট্রাল হল, সংলগ্ন করিডর, স্মোকার্স রুম-এর আড্ডার চেহারাটা। চাপা স্বরে গুঞ্জন চলছে বসপা নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে আরজেডি সাংসদ প্রেম গুপ্তের, জেডিইউ-এর শরদ যাদবের সঙ্গে সপা নেতা মুলায়ম সিংহের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share:

এক লহমায় বদলে গিয়েছে সেন্ট্রাল হল, সংলগ্ন করিডর, স্মোকার্স রুম-এর আড্ডার চেহারাটা। চাপা স্বরে গুঞ্জন চলছে বসপা নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে আরজেডি সাংসদ প্রেম গুপ্তের, জেডিইউ-এর শরদ যাদবের সঙ্গে সপা নেতা মুলায়ম সিংহের। পুরনো নোট বাতিলের ধাক্কায় দলমত নির্বিশেষে আঞ্চলিক দলগুলোর গভীর আশঙ্কা এবং চর্চার প্রধান বিষয় এখন একটাই।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে কড়া নাড়ছে বিধানসভা ভোট। মহারাষ্ট্রে মুম্বই পুরসভা নির্বাচন চলছে জোরকদমে। পশ্চিমবঙ্গে সামনেই দু’টি বিধানসভা ও একটি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন। এমন সময়ে পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোরপক্ষে আদৌ সুখকর নয়। নাম প্রকাশ করতে না-চাওয়া উত্তরপ্রদেশের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বক্তব্য, ‘‘ভোটের জন্য খরচ করার যে টাকা দলগুলোর কাছে মজুত ছিল, তা এখন খরচ করার উপায় নেই। বিভিন্ন কর্পোরেট অনুদান চেকে এলেও, তা মোট ভোট-খরচের অংশমাত্র। প্রশ্নটা কালো টাকারও নয়। ব্যাঙ্ক থেকে তোলা টাকাও তো পাঁচশো ও হাজারের নোটেই মজুত রয়েছে নেতাদের কাছে!’’

মায়াবতী-মুলায়মের বিরুদ্ধে ভোটের আগে প্রতিবারই বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ বিতরণের অভিযোগ ওঠে। তামিলনাড়ুর নির্বাচনেও বিভিন্ন নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই রেওয়াজ ভঙ্গ হলে কী ভাবে ‘ভোটের খরচ’ সামলানো যাবে, সেই চিন্তায় বিনিদ্র রাত কাটছে আঞ্চলিক দলের নেতাদের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গতকাল
সর্বদলীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর পরামর্শ, দুর্নীতি
রুখতে এবং স্বচ্ছতার স্বার্থে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের সময় কেন্দ্র বা নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজ্যগুলোকে প্রচার এবং ভোট সংক্রান্ত অন্যান্য খরচের জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে। কোন দল কত টাকা পাবে তা নির্ভর করবে সেই দল কোথায় কত প্রার্থী দিচ্ছে, আগের বারের নির্বাচনে তাদের কত প্রার্থী কোথায় জিতেছিল, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর।

Advertisement

তৃণমূল ও সিপিএম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলো ঘরোয়া ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের দল ‘সময় মতো’ নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিয়ে বাকিদের সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। আজ রাষ্ট্রপতির কাছে যে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল, তাতে বলা হয়েছে— ‘‘সরকারের এই পদক্ষেপে বহু প্রশ্ন উঠে আসছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তের কথা আগেভাগে জেনে ফেলেছিলেন এবং মজুদ টাকা তাই জমা দিয়ে দিতে পেরেছেন।’’ একে ‘কালো ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গে সামনেই তিনটি উপনির্বাচন। জমানো টাকা খরচের প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় শাসক দলের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোও সমস্যায় পড়েছে। সিপিএম সাধারণত কৌটো নাড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে খুচরোয় অনুদান নেয়। ফলে তাদের সমস্যা কম হওয়ার কথা।

কিন্তু সেই টাকাও তো ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচশো-হাজারেই ফিরে এসেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন