(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পি চিদম্বরম, সীতারাম ইয়েচুরি এবং আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। —ফাইল চিত্র
‘ভয়ঙ্কর’! ‘অসাংবিধানিক’! ‘নজরদার রাষ্ট্র’! দশটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের তথ্যে নজরদারির অধিকার দেওয়া নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া বিরোধী শিবিরে। কেউ আবার কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন, ‘‘তাহলে এটাই ছিল ‘ঘর ঘর মোদী’!’’ সব মিলিয়ে ‘নজরদারি’ ইস্যুতে ফের একজোট বিরোধীরা। প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। যদিও কেন্দ্রের সাফাই, ‘‘নতুন নির্দেশিকায় পুরনো আইনের কথাই আরও নির্দিষ্ট করে বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করা হচ্ছে।’’
এতদিন পর্যন্ত শুধু ই-মেল বা অন্য কোনও অনলাইন মাধ্যমে আদান-প্রদান করা তথ্যের উপরই নজরদারি চালাতে পারত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার সেই এক্তিয়ার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সই করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ বার থেকে দশটি কেন্দ্রীয় সংস্থা যে কোনও ব্যক্তির কম্পিউটারের অফলাইন তথ্যেও নজরদারি চালাতে পারবে। প্রয়োজনে সেই কম্পিউটার বাজেয়াপ্তও করতে পারবে। অর্থাৎ কম্পিউটারে কোনও গোপন তথ্য সেভ করা থাকলেও তার উপরও নজরদারি চালাতে পারবে এই সব সংস্থাগুলি।
শুক্রবার এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস-সহ প্রায় সব বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে এই সিদ্ধান্তকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, এটা যদি নিরাপত্তার খাতিরে করা হয়ে থাকে তাহলে সেই পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে এর জন্য ফল ভোগ করতে হবে কেন? সাধারণ মানুষের মতামতও জানতে চেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: দু’দিন ধরে দিল্লিতে অপেক্ষায় সোমেন-গৌরব, শিমলায় ছুটি কাটাচ্ছেন রাহুল গাঁধী
কংগ্রেসের পি চিদম্বরম থেকে আহমেদ পটেল, আনন্দ শর্মার মতো কেউ সংবাদ মাধ্যমে, কেউ টুইটারে তোপ দেগেছেন।আনন্দ শর্মা বলেন, দেশটাকে বিজেপি একটা নজরদার রাষ্ট্র বানাতে চাইছে। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী, ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’’ এই সিদ্ধান্তকে ‘অরওয়েলিয়ান স্টেট’ বলে টুইট করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। যার অর্থ মুক্ত সমাজ ব্যবস্থার পক্ষে ধ্বংসাত্মক। জর্জ অরওয়েলের লেখা ১৯৮৪-এ এমনই এক নজরদার রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: খুন ও ষড়যন্ত্রের পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই, সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস ২২ অভিযুক্ত
‘দেশের প্রতিটি নাগরিককে কেন দুষ্কৃতী হিসাবে ভাবা হচ্ছে’, এই প্রশ্ন তুলে সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, এই নির্দেশ অসাংবিধানিক, টেলিফোন ট্যাপ গাইডলাইনের পরিপন্থী, এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আধার রায়কে লঙ্ঘন করার শামিল। ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছে সমাজবাদী পার্টিও। দলের নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দেশে সরকার পরিবর্তন হবে। নিজেই নিজের কবর না খোঁড়া বিজেপির পক্ষে মঙ্গল।’’
সরাসরি প্রতিবাদের পাশাপাশি কেন্দ্র তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ শ্লেষও ধেয়ে এসেছে বিরোধী শিবির থেকে। মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, ‘‘কে জানত, ওরা আসলে ‘ঘর ঘর মোদী’ বলতে এটাই বোঝাতে চেয়েছিল।’’ প্রতিবাদ করেছে আম আদমি পার্টিও।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ আছড়ে পড়ছে। টুইটার, ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। ব্যক্তি স্বাধীনতা, গোপনীয়তার অধিকারে সরকার নাক গলাচ্ছে বলে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই।
তবে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে সরকারের তরফে সংসদে সাফাই দিয়েছেন অরুণ জেটলি। ২০০৯ সালে ইউপিএ জমানাতেই তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি অংশ যোগ করে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কারও তথ্যের ওপর নজরদারি চালাতে পারবে না কোনও তদন্তকারী সংস্থা। কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও নির্দিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হলে তবেই তারা কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার ওপর নজরদারি চালাতে পারবে।’ কর্তৃপক্ষ বলতে এখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারকে বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই সময় তদন্তকারী সংস্থাগুলির নাম নির্দিষ্ট করা ছিল না। নয়া নির্দেশে সেটাই করা হয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। অযথা জলঘোলা করা হচ্ছে।’’
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)