india

নাম নিল না নয়াদিল্লি, চিনকে তোপ পম্পেয়োদের

পূর্ব লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডে যখন বসে রয়েছে চিনা সেনা, তখন এই ঘটনাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক শিবির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৯
Share:

ছবি এএফপি।

কিছুটা অভূতপূর্বভাবেই ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে চিনের উদ্দেশে তোপ দাগল আমেরিকা। আজ হায়দরাবাদ হাউসে ভারত এবং আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী (টু প্লাস টু) পর্যায়ের বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে, নাম করে চিনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন আমেরিকার কর্তারা।

Advertisement

পূর্ব লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডে যখন বসে রয়েছে চিনা সেনা, তখন এই ঘটনাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক শিবির। আমেরিকার বিদেশসচিব মাইকেল পম্পেয়ো-র কথায়, ‘‘এখন সবাই জানে যে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গণতন্ত্রের বন্ধু নয়। তারা আইনের শাসন মানে না।’’ অন্য দিকে প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এস্পারের বক্তব্য, ‘‘উদার এবং উন্মুক্ত ভারত প্রশান্তমহাসাগরীয় জলপথকে অস্থির করে রেখেছে চিন। তারা ওই অঞ্চলে হিংসা ছড়াচ্ছে।’’

ভারত ও চিনের মধ্যে দফায় দফায় সামরিক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ের বৈঠকে লাদাখ সঙ্কট সমাধানের প্রয়াস চলেছে। তারই মধ্যে গত সপ্তাহে টোকিয়োয় কোয়াড (ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে), আজকের টু প্লাস টু এবং আগামী মাসে মালাবার সেনা মহড়া এই আলোচনার ভবিষ্যতকে সঙ্কটে ঠেলে দিতে পারে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক শিবিরে। কোয়াড বৈঠকের পরেও পম্পেয়ো নাম করে চিনকে আক্রমণ করেছিলেন। যদিও নিজের বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ছিলেন চিন প্রসঙ্গে মৌন। আজও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরে একাধিপত্যের অবসানের কথা বললেও, জয়শঙ্করকে কিন্তু চিনের নাম করতে শোনা যায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে চুক্তি ভারত, আমেরিকার

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক মাসে চিনের সঙ্গে সংঘাতে ভারতকে ক্রমাগত জড়িয়ে নিতে চাইলেও নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে তাতে ঢুকতে চাইছে না। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ও চিনের মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য রেখেই চলছে সাউথ ব্লক। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন চলতি সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে হলে আমেরিকার ভরসায় নয়, চিনের খাস মিত্র রাশিয়া এবং শি চিনফিং সরকারের সঙ্গেই দরকষাকষির মাধ্যমেই এগোতে হবে, এমনই ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে নয়াদিল্লি। তবে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে বেজিং-এর উপর চাপ তৈরি করাও মোদী সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে গালওয়ান নিয়ে চিনকে কড়া বার্তা পম্পেয়োর

অতিমারির কারণে দীর্ঘ দিন ভিডিয়ো মাধ্যমে কূটনৈতিক বৈঠক ও সম্মেলন সেরেছেন ভারতীয় কর্তা এবং মন্ত্রীরা। দীর্ঘ দিন বাদে আজ কোনও বিদেশি রাষ্ট্রকর্তার বৈঠক এবং সাংবাদিক সম্মেলন হল হায়দরাবাদ হাউসে। যেখানে আমেরিকার বিদেশসচিব নিজেই গালওয়ান প্রসঙ্গ তুলে বললেন, “ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল দেখলাম। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীর নারী ও পুরুষদের স্মৃতি রয়েছে, যাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে গালওয়ান উপত্যকার ২০ জন, যাঁদের চিনা সেনা হত্যা করেছে। ভারতের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে আমরা পাশে রয়েছি।“ তাঁর কথায়, “ভারত এবং আমেরিকা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সমস্ত পদক্ষেপ করছে। শুধুমাত্র চিনা কমিউনিস্ট পার্টি নয়, সব রকম হুমকির মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।’’
আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এস্পারও বলেন, “ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে মূল্যবোধ, স্বার্থের সাযুজ্য রয়েছে। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব স্বাধীন ভারত প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য। এটা করতেই হবে, কারণ, চিন গোটা অঞ্চলকে অস্থির করে তুলতে হিংসা বাড়াচ্ছে।’’

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অবশ্য বৈঠকের পর কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, “ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমস্ত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখার গুরুত্ব নিয়ে কথা হয়েছে। কথা হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সাম্প্রতিক গতিবিধি নিয়ে। আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস মেনে নেওয়া হবে না।’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কথায়, “আইনকে মান্যতা দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বহাল রাখার ব্যাপারে আমরা একমত। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে নৌ যাত্রার স্বাধীনতা, সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন