National News

গোটা গ্রাম দৌড়েও স্ত্রী-র সত্কারের জন্য এক পয়সা মিলল না!

স্ত্রী অসুস্থ। চিকিত্সার জন্য তাঁকে বাসে করে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বামী। কিন্তু, মাঝপথে বাসের মধ্যেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। আর তার পরেই চালক স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে বাস থেকে স্বামীকে নামতে বাধ্য করেন।দিন কয়েক আগে মধ্যপ্রদেশের দামোর এই ঘটনা মানবিকতার সংজ্ঞাটাকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৪৯
Share:

সত্কারের আয়োজন করা হচ্ছে।

স্ত্রী অসুস্থ। চিকিত্সার জন্য তাঁকে বাসে করে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বামী। কিন্তু, মাঝপথে বাসের মধ্যেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। আর তার পরেই চালক স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে বাস থেকে স্বামীকে নামতে বাধ্য করেন।

Advertisement

দিন কয়েক আগে মধ্যপ্রদেশের দামোর এই ঘটনা মানবিকতার সংজ্ঞাটাকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই নড়বড়ে অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ফের টালমাটাল হয়ে পড়ল অন্য এক ঘটনায়। এবং ঘটনাচক্রে এ বারও মধ্যপ্রদেশের নাম জড়িয়ে পড়ল।

রতনগড়। মধ্যপ্রদেশের নিমাচ এলাকার অখ্যাত এক গ্রাম। গত শুক্রবার সেখানকার বাসিন্দা জগদীশ ভিলের স্ত্রী নোজিবাঈ হঠাত্ই মারা যান। শোকের সেই পরিস্থিতির মধ্যেই দিন আনা দিন খাওয়া জগদীশের কপালে চিন্তার ভাঁজ অন্য কারণে। কী ভাবে স্ত্রী-র সত্কার হবে? নেই নেই করে হাজার আড়াই টাকার প্রয়োজন। কিন্তু, কাঠুরে এই পরিবারের কাছে সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? ভাঁড়ে তো মা ভবানী! কার কাছে হাত পাতবেন? তাই স্ত্রী-র দেহ বাড়িতে ফেলেই তিনি ছুটেছিলেন পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। কিন্তু ‘কিছুই করার নেই’ বলে জগদীশকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রধান।

Advertisement

স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে কালাহান্ডির দানা মাঝি।

কিন্তু, হাল ছাড়েননি হতদরিদ্র জগদীশ। সাহায্যের আশায় দৌড়ে গিয়েছিলেন গ্রামেই এক ব্যবসায়ীর কাছে। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। যোগাযোগ করতে বাড়ির লোকের কাছে তাঁর মোবাইল নম্বর চেয়েও পাননি জগদীশ। ও দিকে স্ত্রী-র দেহ বাড়িতেই পড়ে রয়েছে। আর স্বামী টাকার জন্য গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ে বেড়িয়েছেন। উদ্‌ভ্রান্তের মতো এ দিক ও দিক ছুটে বেড়াতে দেখে অনেকেই তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কী হয়েছে? কিন্তু, সব শুনেও কেউ সামান্যতম অর্থও সাহায্য করেননি তাঁকে। উল্টে পরামর্শ জুটেছে, “এত ছোটাছুটি করে লাভ কী! স্ত্রী-র দেহ নদীতে ফেলে দিয়ে এসো।”

ইতিমধ্যেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। উপায়ন্তর না দেখে হতাশ, ক্লান্ত জগদীশ এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা সত্কারের অন্য উপায় বের করেন। গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টিক, টায়ার, এমনকী গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে এসে জড়ো করেন তাঁরা। তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই পর্ব। কিন্তু, তার পরেও যে পরিমাণ প্লাস্টিক, টায়ার ও কাঠ জোগাড় করেছিলেন তাঁরা সত্কারের জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল না। অবশেষে নোজিবাঈকে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সব কিছু যখন ঠিকঠাক, তখন এক সামাজকর্মী সত্কারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি কাঠের ব্যবস্থা করেন। সকালে মারা যাওয়া নোজিবাঈয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বিকেল পাঁচটায়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যখন শেষ, তখন প্রশাসনিক সাহায্য আসে। এমনকী, জগদীশের বাড়িতে সত্কারের কাঠও পাঠিয়ে দেওয়া হয়।


মধ্যপ্রদেশের দামোর সেই ঘটনা। স্ত্রীর দেহ নিয়ে রাস্তায় সেই ব্যক্তি।

নিমাচের জেলাশাসক রজনীশ শ্রীবাস্তব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তাঁর কথায়, “গ্রামপঞ্চায়েতের কোনও গাফিলতি ধরা পড়লে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” পাশাপাশি, তিনি জানান, খবর পাওয়া মাত্রই এসডিও-কে দিয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতে সত্কারের কাঠ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

কালাহান্ডির দানা মাঝি, বালেশ্বেরের সালামণি বারিক এবং মধ্যপ্রদেশের দামোর ঘটনা অমাবিকতার দৃষ্টান্তকে বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও ছবিটা যে এক চুলও বদলায়নি নোজিবাঈয়ের ঘটনা তারই প্রমাণ।

আরও খবর...

ট্রেনে উধাও ভাই, নিরাশ চা শ্রমিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন