অপরাধের গুরুত্ব বিচার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কম কোনও সাজা রাম রহিমের হওয়া উচিত নয়। বলছেন আইনজীবীরা। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় দণ্ডবিধিতে (আইপিসি) একই ধারায় বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সংস্থান রয়েছে। কারও ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মেয়াদের সাজা হয়, কারও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদের, কারও ক্ষেত্রে আবার মাঝামাঝি কোনও মেয়াদের সাজাও হয়। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করেই বিচারক সাজার পরিমাণ বা মেয়াদ স্থির করেন। ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ যে অপরাধ করেছেন, তাতে কিন্তু তাঁর সর্বোচ্চ মেয়াদের সাজাই হওয়ার কথা।
কী অভিযোগ রাম রহিমের বিরুদ্ধে?
গুরমিত রাম রহিম সিংহের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ৩৭৬ ধারায়। অর্থাৎ ধর্ষণের অভিযোগ। বিশেষ সিবিআই আদালতে সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং, ৩৭৬ ধারা অনুযায়ীই সাজা হবে।
এই অপরাধে সাজার মেয়াদ কী?
৩৭৬ ধারায় সর্বনিম্ন সাজার মেয়াদ হল ৭ বছর। আর সর্বোচ্চ সাজা হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
রাম রহিমের কী সাজা হতে পারে?
গুরমিত রাম রহিম সিংহ যে রকম প্রভাবশালী এবং যে ধরনের অপরাধ তিনি ঘটিয়েছেন, তাতে তাঁর সর্বনিম্ন মেয়াদের সাজা হওয়ার কথা নয়। বরং সর্বোচ্চ মেয়াদের সাজা অর্থাৎ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই হওয়া উচিত। বিচারক যদি কোনও কারণে সেই সর্বোচ্চ মেয়াদের সাজা তাঁকে না দিতে চান, তা হলে অন্তত ১০ বছরের কারাদণ্ড তো হওয়াই উচিত।
আরও পড়ুন: বিশ্বাসের নামে হিংসা বরদাস্ত নয়, মন খুললেন ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী’
আরও পড়ুন: গুরমিত ধর্ষক! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ছোটবেলার বন্ধুদের
গুরমিত রাম রহিম সিংহের অপরাধের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। প্রথমত, তিনি একটি ধর্মীয় সংগঠনের শীর্ষপদে থাকা অবস্থায় এই জঘন্য অপরাধ করেছেন, কোনও সাধারণ নাগরিক হিসেবে নয়। দ্বিতীয়ত, এই রাম রহিম নিজের আশ্রিতাদেরই ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষিতারা তাঁরই সংগঠনের সাধ্বী, তাঁরই শিষ্যা। অর্থাৎ, অভিভাবক হিসেবে যাঁদের রক্ষা করার কথা ছিল, রাম রহিম তাঁদের ধর্ষণ করেছেন। সেখানে গিয়েই অপরাধটা আরও জঘন্য হয়ে উঠেছে। তার পরেও বিভিন্ন রকম ভাবে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন রাম রহিম, তাঁর ডেরার এক কর্মকর্তাকে রহস্যজনক ভাবে খুনও হয়ে যেতে হয়েছে। এই রকম অপরাধীর ক্ষেত্রে সহানুভূতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কম কোনও সাজাই যথেষ্ট নয়।
(লেখক কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী)