স্বেচ্ছা মৃত্যুর হুমকি প্রত্যুষার মা-বাবার

মেয়ের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী, জানতে চেয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি মহারাষ্ট্র সরকার। এ বার নিজেদের শহর জামশেদপুরে ফিরে গিয়ে সই সংগ্রহ শুরু করলেন শঙ্কর এবং সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা-মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

মেয়ের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী, জানতে চেয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি মহারাষ্ট্র সরকার। এ বার নিজেদের শহর জামশেদপুরে ফিরে গিয়ে সই সংগ্রহ শুরু করলেন শঙ্কর এবং সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা-মা।

Advertisement

তাঁদের দাবি মানা না হলে কেন্দ্রের কাছে তাঁরা স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন জানাবেন বলেও দাবি করেছেন বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি। প্রত্যুষার বাবা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “মেয়ে আমাদের একমাত্র সম্বল ছিল। সে কী ভাবে মারা গেল, আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। পুরো ধোঁয়াশায় রয়েছি। মেয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে না পারলে আমি ও আমার স্ত্রী ভারত সরকারের কাছে স্বেচ্ছা মৃত্যুর জন্য আবেদন করব। কেন এ ভাবে ওকে মরতে হল, তার আসল কারণ জানতে না পারলে আমরা কিছুতেই মনে শান্তি পাব না।”

গত কালই মুম্বই থেকে জামশেদপুরের সোনারিতে ফিরেছেন শঙ্করবাবু ও সোমাদেবী। শঙ্করবাবুর দাবি, “তিতান আত্মহত্যা করেনি। ওকে পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে মুম্বইতে তিতানের জন্য অনেক লড়াই করেছি। আমাদের কাছে নানা তথ্যও রয়েছে। ওর সঙ্গে শেষ কথা যখন হয়েছিল, তখনই বুঝেছিলাম ওর মন খুব অস্থির হয়ে আছে। কিন্তু ওর যা মনের জোর ছিল তাতে আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতি কোনও অবস্থাতেই ছিল না।”

Advertisement

শেষ কী কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে? গলার স্বর বুজে আসে শঙ্করবাবুর। কান্না চেপে বললেন, “মেয়ে খুব জ্যোতিষ বিজ্ঞানে বিশ্বাস করত। প্রতি সপ্তাহের শুরুতেই আমি ওকে ফোনে ওর রাশিফল পড়ে শোনাতাম। মৃত্যুর আগের দিন আমাকে ফোনে তিতান বলল, ‘বাবা আগামী সপ্তাহটা আমার কেমন যাবে, একটু রাশিফলটা পড়ে শোনাও তো।’ আমি ওকে সাপ্তাহিক রাশিফল পড়ে শোনাই। বলি, সব ভাল ভাল কথা লেখা আছে তিতান। কিন্তু সে কথা তিতান মানতে চায়নি। শুধু বলে না বাবা, ‘লাইফ ইজ ভেরি হার্ড, লাইফ ইজ ভেরি হার্ড’।” শঙ্করবাবু জানান, এর পরই ফোনে কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পান তিনি। কে এসেছে দেখতে গিয়েছিলেন প্রত্যুষা। মিনিটখানেক পরে ফিরে এসে তিনি বাবাকে বলেছিলেন, ‘‘পাঁচ মিনিট পরে ফোন করছি।’’

কিন্তু তিতানের আর ফোন আসেনি শঙ্করবাবুর কাছে। সেই শেষ মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। শঙ্করবাবু এ-ও জানালেন, এত দিন ধরে মুম্বইতে পড়ে থাকার পরেও মেয়ের মৃত্যুর ময়না-তদন্তের রিপোর্ট তাঁরা হাতে পাননি। শঙ্করবাবু বলেন, “মেয়েকে গর্ভপাত করতে হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু তার কোনও রিপোর্টও আমাদের হাতে আসেনি। মুম্বই পুলিশের যে তদন্তকারী অফিসার মামলার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁকে বলেছিলাম আসল নথিগুলো তদন্তের কাজে লাগলে আমাকে অন্তত হোয়াটসঅ্যাপ করে ময়না-তদন্ত আর গর্ভপাতের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিন। সেটা পর্যন্ত দেননি ওঁরা। এত লুকোচুরি কেন? কেন এত ধোঁয়াশার মধ্যে থাকতে হবে? আমাদের আর্থিক বল কম বলে কি প্রকৃত বিচার পাব না?”

মৃত্যুর আগে নানা কারণে প্রত্যুষার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল বলে জানতে পারেন শঙ্করবাবু। তবে তিনি আজ বলেন, “এটা ঠিক নয়। ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তিতানের ব্যাঙ্ক ঋণ ছিল মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। ওর মতো সেলিব্রেটির কাছে এই ঋণ শোধ করাটা সমস্যা নয়।” শঙ্করবাবু জানিয়েছেন, আজ থেকে যে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে জামশেদপুরের প্রচুর মানুষ সামিল হয়েছেন। আগামী কাল তিনি মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের সঙ্গে দেখা করবেন। সিবিআই তদন্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও যাতে কেন্দ্রকে জানান, সে বিষয়ে তাঁকে অনুরোধ করবেন শঙ্করবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন