মন্ত্রীর নামে চিঠি লিখে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল এক যুবক। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মন্ত্রীর প্যাডের পাতা কী ভাবে ওই যুবকের কাছে এল তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। অভিযোগ, বিহারের এক মহিলা মন্ত্রীর অনুগামী নওয়াদা এলাকার বাসিন্দা রাজেন্দ্র কুমার দীর্ঘদিন ধরেই এ ভাবে তোলাবাজি চালাচ্ছেন। পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে মন্ত্রী অবশ্য রাজেন্দ্র কুমারকে চেনেন না বলে নিজের দায় এড়িয়েছেন।
বিহারের মন্ত্রী বিমা ভারতীর স্বামী অবধেশ মণ্ডলকে ফোন করে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে দু’দিন আগে। থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন অবধেশ। তদন্তে নেমে পুলিশ কার্যত কোনও তথ্যই পায়নি।
মুঙ্গেরের কমিশনার লিওন কুংগা-র কাছে ৫০ লক্ষ টাকা চেয়ে জঙ্গি সংগঠন আইসিসের নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিশনার ছাড়াও মুঙ্গেরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছেও চিঠি পৌঁছেছে। চিঠি কে পাঠিয়েছে তা নিয়ে ধন্দ থাকলেও আসল উদ্দেশ্য যে তোলাবাজি তা নিয়ে পুলিশ একমত।
এখানেই শেষ নয়, দাবি মতো তোলা না পেয়ে দিন দুয়েক আগে চলন্ত ট্রেনে গুলি করে খুন করা হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে। আরা জেলার ওই ঘটনার তদন্তে নেমে শাসক দলের নেতার ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের যোগ রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকেরা সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেছেন।
অপরাধের তালিকা দিনের পর দিন দীর্ঘই হচ্ছে। তাতে চিন্তা বাড়ছে নীতীশ সরকারের। গত তিন বছরে লালুপ্রসাদের সঙ্গে নীতীশের সখ্যতার পর থেকে অপরাধ বাড়ছে বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। বিহার সরকার এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস্ ব্যুরোর রিপোর্ট বিরোধীদের বক্তব্যকেই সমর্থন করছে। সব মিলিয়ে সাধারণ বিহারবাসীর কাছে নিজের ‘ইমেজ’ কিছুটা হলেও খারাপ হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন নীতীশ কুমার। আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেও রাজনীতির সমীকরণ কিছুটা হলেও পিছনে ঠেলছে নীতীশকে।
কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান। সেখানে প্রায় প্রতিটি অপরাধেই এক থেকে পাঁচের মধ্যে রয়েছে বিহার। ডাকাতি, তোলাবাজি এবং অপহরণে প্রথম সারিতে রয়েছে বিহার। এই পরিসংখ্যান রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতীশ সরকারের।
গত ছ’মাসের অপরাধের হিসেব তুলে ধরলেই ছবিটা কিছুটা হলেও পরিষ্কার হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিহারে খুন হয়েছেন ১৬২৭ জন। অপহরণের অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে ৩৬৬৯টি। আর সেই তথ্য পাওয়ার পরে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘বিহার পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্যই বলছে সমস্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মারাত্মক অপরাধের সংখ্যা ছিল ১৩৮০৮টি। ছ’মাসের মধ্যে সেই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ১৮৫৬৪টিতে। ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে অপরাধে। এটাই তো জঙ্গলরাজের শুরু।’’
গত ছ’মাসে খুনের হার বেড়েছে ৪৬ শতাংশ সে কথাও জানিয়েছেন মোদী। আর বিহার সরকারের সেই তথ্য নিয়েই রাজনীতির বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। তবে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় তা জানাতে ভোলেননি জেডিইউ নেতারা। দলের মুখপাত্র অজয় অলোক বলেন, ‘‘নারী সুরক্ষায় অনেক এগিয়ে রয়েছে বিহার। অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আরও ভাল করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে চলেছি।’’