উরি-তদন্তে রাজি পাকিস্তান

নিরাপত্তায় গলদ দেখছেন গোয়েন্দারা

উরি সেনা ছাউনির হামলার তদন্তে নেমে নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ খুঁজে পেলেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, এক দিকে যেমন পাহারায় থাকা জওয়ানদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, তেমনই অন্য দিকে ওই সেনা ছাউনিতে নিরাপত্তার প্রাথমিক শর্তগুলিও মানা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

উরি সেনা ছাউনির হামলার তদন্তে নেমে নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ খুঁজে পেলেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, এক দিকে যেমন পাহারায় থাকা জওয়ানদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, তেমনই অন্য দিকে ওই সেনা ছাউনিতে নিরাপত্তার প্রাথমিক শর্তগুলিও মানা হয়নি। অন্য দিকে উরিতে হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তে তারা সাহায্য করতে রাজি বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

Advertisement

উরিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে খবর, হামলাকারী চার জঙ্গি পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে হাজি পির পাস দিয়ে ভারতে ঢোকে। হামলার আগের দিন তারা সেনা ছাউনি সংলগ্ন সুখধার গ্রামে লুকিয়ে ছিল। ওই গ্রামে কারা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল, এখন তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা বলছেন, সুখধার গ্রামটি পাহাড়ের ঢালে হওয়ায় সেখান থেকে নীচে সেনা ছাউনির জওয়ানদের গতিবিধি অনায়াসে লক্ষ্য করা যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, হামলার আগের দিন চার জঙ্গি ওই গ্রামে বসে দিনভর সেনা ছাউনির ভিতরকার গতিবিধির উপরে নজর রেখেছিল। কোনখান দিয়ে ঢুকে কী ভাবে হামলা করলে সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়ে ওই গ্রামে বসেই ফোনের মাধ্যমে পাকিস্তানে থাকা নাটের গুরুদের সঙ্গে জঙ্গিরা কথা বলেছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। সেই কারণে গত শুক্র ও শনিবার উরি এলাকা থেকে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে যত ফোন হয়েছে, তার কল রেকর্ড সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

রবিবার ভোর রাতে ছাউনির পিছনের দিকের তারজালি কেটে ভিতরে ঢোকে জঙ্গিরা। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা দেখেছেন, যে জায়গাটি দিয়ে অনুপ্রবেশ হয়েছিল, ছাউনি সংলগ্ন সেই অংশটি বড় বড় ঘাস ও ঝোপঝাড়ে ঢাকা। গোয়েন্দা-কর্তাদের বক্তব্য, যে কোনও ছাউনির সামনে এত বড় ঘাস থাকা নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ এতে নজরদারি চালাতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে। এ ক্ষেত্রেও তাই ওই অংশে পাহারার দায়িত্বে থাকা জওয়ান জঙ্গিদের গতিবিধি বুঝতেই পারেননি। একই সঙ্গে সেনা তাঁবুর পাশেই যে ভাবে ডিজেল মজুত করে রাখা ছিল, তা-ও নিয়মবিরুদ্ধ। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড থেকে বিস্ফোরণের ফলে ডিজেলে আগুন লেগে যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে। কেন এই প্রাথমিক নিয়মগুলি নিয়ম মানা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দারা। প্রশ্ন উঠেছে পাহারার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রিদের ভূমিকা নিয়েও। তারজালি কেটে ভিতরে ঢুকে জঙ্গিরা প্রথমে কাছাকাছি থাকা সেন্ট্রির উপর হামলা চালায়। হামলার সময়ে সেন্ট্রির ভূমিকা ও ১৫০ ফুট দূরে থাকা অন্য সেন্ট্রিকে সতর্ক করে দিতে না পারার পিছনে সমন্বয়হীনতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

উরিতে হামলা নিয়ে গত কয়েক দিনে বিশ্ব মঞ্চে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে পাকিস্তান। আজ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ বলেছেন, ‘‘উরি নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তে সহযোগিতা করতে তৈরি। এ নিয়ে পাকিস্তানকে দুষে লাভ নেই।’’

হামলার ঘটনার পরে উরি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অবশ্য জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টাও অব্যাহত। এ দিনই উরি ও নওগাম দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ ভোর রাতে উরি ও নওগাম এলাকায় জঙ্গিরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়ে সেনা। শুরু হয় গুলি বিনিময়। পিছিয়ে যায় জঙ্গিরা। আজ উরি থেকে আজ দুই কিশোরও আটক হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তারা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, ১৫ ও ১৬ বছরের সাহিল হুসেন এবং ইয়াসিন খুরশিদের বাড়ি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের খিলানা গ্রামে।

বন্দিপোরাতেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে। সেখানে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে এক জঙ্গি। সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের পরেই বান্দিপুর এলাকায় পথে নামেন সাধারণ মানুষ। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন