বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
আকাশপথে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর কেরলে ৫০০ কোটি টাকার অন্তর্বর্তী ত্রাণ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে মৃতের পরিবারবর্গকে ২ লক্ষ টাকা করে ও গুরুতর আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে ত্রাণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বিকেলেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অন্তেষ্টি শেষ করে জরুরি ভিত্তিতে কেরলে পৌঁছেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কর্মসূচি ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু সকাল থেকে টানা বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার ওড়াতে রাজি হয়নি নৌসেনা। তাই উড়ান বাতিল করে নৌসেনা ঘাঁটিতেই শুরু হয় জরুরি বৈঠক। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যপাল পি সদাশিবম, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সহ রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
বৈঠক শেষে আবহাওয়া পরিস্থিতি একটু ভাল হলে আকাশপথে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বেরোন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। গত একশো বছরে এই পর্যায়ের বিপর্যয় হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। উদ্ধারকার্য ও ত্রাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন তিনি।
দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: কেরলে মাত্র ন’দিনেই বন্যায় মৃত বেড়ে ৩২৪
এদিকে অধিকাংশ জেলায় এখনও জলবন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষ। আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বেশ কয়েকটি জেলায়। তাই বৃষ্টি আর বন্যার দাপট অব্যাহত। বাড়তি জলে ফুঁসছে পেরিয়ার সহ আরও বেশ কয়েকটি নদী। বাঁধগুলিতে বাড়ছে জল, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এখনও অবরুদ্ধ উত্তর আর মধ্য কেরলের অধিকাংশ এলাকাই।
উদ্ধারকার্যে আরও বেশি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর আর্জি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। এখন পর্যন্ত নিজেদের বৃহত্তম উদ্ধারকার্য অভিযানে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠানো হয়েছে মোট ৫৮ টি দল। যার মধ্যে ৫৫ টি দল ইতিমধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কেরলে এখন কাজ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি শাখাই। উদ্ধারে নেমেছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি উপকূল এলাকায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষেরাও হাতে হাত লাগিয়ে উদ্ধারের কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: ‘প্রায় ১২ ঘণ্টা ঠায় বাস দাঁড়িয়ে হাইওয়েতে, জল নেই, খাবার নেই’
কেরলের বন্যাকে অবিলম্বে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করা হোক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। দেশের সব কংগ্রেস সাংসদ ও বিধায়ককে এক দিনের বেতন ত্রাণতহবিলে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ত্রাণকার্যে সাহায্যের জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। কেরলের অসংখ্য মানুষ এই দেশে কাজ করেন। তাই কেরলের বিপর্যয়ে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শেখ খালিফা। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফেও পাঠানো হয়েছে বিশেষ বাহিনী।
দেখুন ভিডিয়ো
উদ্ধারকার্য পুরোদমে চললেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে বিপর্যয়ের খবর। বন্ধ কোচি বিমানবন্দর। ইদুক্কিতে ধসে তলিয়ে গিয়েছে সরকারি বাস ডিপো। ধসে অবরুদ্ধ জাতীয় সড়কও। উদ্ধারের কাজের জন্য আপাতত ইদুক্কি ও ইদামালায়ার বাঁধ থেকে কম জল ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে বাঁধের ওপর চাপ বাড়ছে। বৃষ্টি আরও হলে বাঁধ থেকে আরও বেশি জল ছাড়া হতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করেছে প্রশাসন। জল বাড়ছে আলাপুঝা শহরেও। শুধু শুক্রবারই একদিনে কেরলে ১০৬ জন মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৩২৪। মৃতদের অধিকাংশই ধসে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন বলে অনুমান প্রশাসনের।
আরও পড়ুন: কেরলের জন্য ত্রাণ বাংলায়, চালু ট্রেনও
তবে আশার আলো দেখা গিয়েছে মালাপ্পুরম জেলায়। গত কয়েক দিন এখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকলেও আস্তে আস্তে জলস্তর নামছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে এসেছে। যদিও রাস্তা বন্ধ, পেট্রল পাম্পও বন্ধ। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। পানাদন্দ এলাকায় দুশো জন জলবন্দি গ্রামবাসীকে উদ্ধার করেছে নৌসেনা। তবে আবহাওয়া দফতর বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় নতুন করে এগারোটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে কেরল প্রশাসন।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।