দশ লাখি স্যুটের ঠেলায় ২৯ টাকার থালিতে

দশ লাখি স্যুট পরে বারাক ওবামার সঙ্গে চা খেতে বসেছিলেন তিনি। দিল্লির বিজেপি নেতাদের অনেকে বলেন, সেটাই কাল হয়েছিল। ওই দশ লাখি স্যুটের ছবি দেখিয়েই অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লির জনতাকে বুঝিয়ে ছেড়েছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী মোটেও আম আদমি নন। আপাদমস্তক খাস আদমি। সেই স্যুট নিলামে বেচে দিয়েছেন কিছু দিন হলো। এ বার তিনি মধ্যাহ্নভোজ সারলেন সাংসদদের আম দরবারে। সংসদের ক্যান্টিনে। তিনি যে একেবারে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসেছেন, তা মনে করিয়ে দিতেই হোক বা মনের খেয়াল, মোদী আজ অন্যান্য সাংসদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খেলেন ক্যান্টিনের ভাত, রুটি, ডাল, স্যালাড, রাজমার তরকারি, পালং শাক ও সাদা দই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

দশ লাখি স্যুট পরে বারাক ওবামার সঙ্গে চা খেতে বসেছিলেন তিনি। দিল্লির বিজেপি নেতাদের অনেকে বলেন, সেটাই কাল হয়েছিল। ওই দশ লাখি স্যুটের ছবি দেখিয়েই অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লির জনতাকে বুঝিয়ে ছেড়েছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী মোটেও আম আদমি নন। আপাদমস্তক খাস আদমি। সেই স্যুট নিলামে বেচে দিয়েছেন কিছু দিন হলো। এ বার তিনি মধ্যাহ্নভোজ সারলেন সাংসদদের আম দরবারে। সংসদের ক্যান্টিনে।

Advertisement

তিনি যে একেবারে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসেছেন, তা মনে করিয়ে দিতেই হোক বা মনের খেয়াল, মোদী আজ অন্যান্য সাংসদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খেলেন ক্যান্টিনের ভাত, রুটি, ডাল, স্যালাড, রাজমার তরকারি, পালং শাক ও সাদা দই। তার পর ফ্রুট স্যালাড। বিল এল ২৯ টাকা। নিজেই মেটালেন তা। বিদায় নেওয়ার আগে ভিজিটর্স বুকে লিখলেন, ‘অন্নদাতা সুখী ভব’।

তরুণ বয়সে মোদী নিজেও কিছু দিন ছিলেন ‘অন্নদাতার’ ভূমিকায়। আমদাবাদে গুজরাত ট্রান্সপোর্ট অফিসের ক্যান্টিন চালাতেন তিনি। সেখানেই আরএসএস কর্মী আম্বালাল কোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ ও সেই সূত্রে সঙ্ঘ-জীবনে প্রবেশ। এর পরে অনেক পর্ব পেরিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই দশ লাখি এক স্যুট তাঁর ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছে যথেষ্ট। সেই ক্ষতিই কি পুষিয়ে নিতে চাইলেন মোদী? এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য সাংসদের সঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজন সারছেন, খুবই ভাল কথা। কিন্তু এ সব যেন প্রতীকী হয়েই থেকে না যায়!”

Advertisement

প্রতীকী হোক বা না হোক, দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের দোতলার ক্যান্টিনে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন, এমন নজির মনে করতে পারছেন না ক্যান্টিনের পুরনো কর্মচারীরাও। তাঁরা বলছেন, রাজীব গাঁধী এক বার এসেছিলেন বটে। তবে তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন।

পদের গরিমা হোক বা নিরাপত্তার কারণে, এ দেশে প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণ রেস্তোরাঁ বা কাফেটেরিয়ায় ঢুকে পড়ছেন, এমনটা দেখা যায় না। বিদেশে অবশ্য ঝুড়ি ঝুড়ি নজির রয়েছে এর। হোয়াইট হাউসে বেসমেন্টের মেসে যেমন শুক্রবার সন্ধের ‘হ্যাপি আওয়ার’-এ প্রায়ই ঢুঁ মারেন বারাক ওবামা। ঠান্ডা বিয়ারের বোতল নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে আড্ডায় বসে পড়েন। এমনই এক আড্ডায় কাগজের ন্যাপকিনে লেখা নোট থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পের জন্ম।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এমনটা প্রায়ই করে থাকেন। পাত্র-মিত্র-অমাত্যদের সঙ্গে নিয়ে মহাকরণের ক্যান্টিনে মধ্যাহ্নভোজও সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী থাকার সময় সংসদের ক্যান্টিনের খাবার আনিয়ে খেতে ও খাওয়াতে ভালবাসতেন মমতা। বিল মেটাতেন নিজেই। এমনকী, বাঙালি রাঁধুনি আনিয়ে আলুর চপ, মাছের ঝোলও শুরু করেছিলেন তিনি।

মোদীর আমলে অবশ্য সংসদের ক্যান্টিনের মেনুতে এখনও গুজরাতি খানা ঢোকেনি। কিন্তু একতলার অফিস থেকে উঠে এসে তিনি নিজেই যে দোতলার ক্যান্টিনে ঢুকে পড়বেন, এমনটাও কেউ আশা করেননি। বেলা একটায় প্রধানমন্ত্রীকে ক্যান্টিনে ঢুকতে দেখে উপস্থিত জনা বিশেক সাংসদ তাই বেশ চমকে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সকলকে নমস্কার জানান। তার পর এক টেবিলে গুজরাতের দুই সাংসদকে দেখে তাঁদের সঙ্গে বসে পড়েন খেতে। বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে দেখেই উপস্থিত সাংসদ, ক্যান্টিন-কর্মীরা মোবাইলে ছবি-ভিডিও তুলতে শুরু করেন। হোয়াট্সঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। ক্যান্টিনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার নিজেই এগিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। “স্যার, বিশেষ কিছু লাগবে?” মোদী বলেন, “না, না, সাধারণ নিরামিষ থালিই চলবে।” ফ্রুট স্যালাডও দিতে বলেন তিনি। বোতলের জল না কিনে গ্লাসে ফিল্টারের জলেই চুমুক দেন। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে বিল আনতে বলেন মোদী। ওয়েটার রামাশঙ্কর পরে বললেন, “২৯ টাকা বিল হয়েছিল। উনি একটা ১০০ টাকার নোট দিলেন। আমি ৭১ টাকা ফেরত দিলাম।”

প্রধানমন্ত্রীর হাজিরা যে বিরল ঘটনা, তা বুঝতে পেরে ভিজিটর্স বুক এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্যান্টিনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার। মোদী দেবনাগরীতে লেখেন, ‘অন্নদাতা সুধী ভব’ অন্ন জোগাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা সুখী হোন। তার পর সই করে বেরিয়ে যান। বাইরে তত ক্ষণে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভিড় জমে গিয়েছে ক্যান্টিনের বাইরে। চ্যানেলে চ্যানেলে ‘ব্রেকিং’ খবর, পথ ভাঙা মোদীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন