কর সম্ভবত শুধু সুদে

বিতর্কের ঝড়ের মুখে পরীক্ষা এখন পিএফ

মধ্যবিত্তের উপর কোপ বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে চার দিকে। ১০ মার্চ দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ১১টি কর্মী সংগঠন। তবু তার মধ্যেও কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডকে (ইপিএফ) করের আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্তে অটল থাকার ইঙ্গিতই দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

স্বাগত। এনডিএ সাংসদদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

মধ্যবিত্তের উপর কোপ বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে চার দিকে। ১০ মার্চ দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ১১টি কর্মী সংগঠন। তবু তার মধ্যেও কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডকে (ইপিএফ) করের আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্তে অটল থাকার ইঙ্গিতই দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সরকারের যুক্তি, অবসরের পরে বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা যাতে পেনশন প্রকল্পগুলির দিকে ঝোঁকেন, সেই কারণেই সংস্কারের এই পদক্ষেপ।

Advertisement

তবে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে হয়তো সে বিষয়ে এক কদম পিছোতে পারে কেন্দ্র। পিএফের মূল টাকায় হাত না দিয়ে করের আওতায় আনতে পারে সুদের একাংশকে। আজ অন্তত মৌখিক ভাবে এনডিএ এবং বিরোধী নেতাদের সেই আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। একই ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রকের রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া। বলেছেন, আগামী ১ এপ্রিল থেকে জমা পড়া পিএফের মোট তহবিলের ৬০ শতাংশের উপর নয়, কর বসবে তাতে পাওয়া সুদটুকুতে। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে বিষয়টি বিবেচনাধীন।

কেন্দ্রের যুক্তি তাতেও তাদের লাভ। কারণ, এত দিন পিএফে জমা পড়া টাকা এবং তাতে পাওয়া সুদ— কোনও কিছুর উপরেই কর ছিল না। বাজেটে পিএফ তহবিলের একাংশের উপর কর বসানোর কথা বলে সরকার জল মেপে নিল। এখন বিরোধিতা দেখে বাজেট পাশ করানোর সময় অর্থ বিলে সংশোধন করে শুধু সুদের উপর কর বসানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আখেরে এক ধাপ এগোনোই হল।

Advertisement

মন্ত্রকের যুক্তি, অনেকে অবসরের পরে পিএফের পুরো টাকা একবারে তুলে ফেলেন। কিন্তু এখনকার বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী তা করতে গেলে
কর দিতে হবে। কিন্তু ওই টাকায় পেনশন পাওয়ার অ্যানুইটি প্রকল্প কিনলে কর গুনতে হবে না। ফলে মানুষ সে দিকে ঝুঁকবেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জেটলির বামপন্থী বাজেট গ্রাম-গরিবের দিকে তাকিয়ে তৈরি। তার মধ্যে যে তিনটি সংস্কারের দেখা মিলেছে, পিএফে কর তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। বাকি দু’টি হল— বাস পরিবহণে পারমিট-রাজ তুলে উবের-ওলার মতো সংস্থাকে ব্যবসায় নামার দরজা খুলে দেওয়া। আর আধার নম্বরের মাধ্যমে ভর্তুকি সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে পৃথক আইনের ঘোষণা। সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত অবশ্য পিএফে করই।

বাজেটে বলা হয়েছিল, আগামী ১ এপ্রিল থেকে অবসর পর্যন্ত পিএফে যে টাকা জমা পড়বে এবং তাতে যা সুদ মিলবে, সেই মোট টাকার ৪০% তুলতে কর দিতে হবে না। অনেকেই সন্তানের শিক্ষা, বিয়ে বা অন্য প্রয়োজনে পিএফ থেকে থোক টাকা তোলেন। কিন্তু বাকি ৬০% টাকা তুলতে গেলে আয়কর চাপবে। যদি না তা দিয়ে কোনও পেনশন প্রকল্প বা অ্যানুইটি কেনা হয়। উল্লেখ্য, ওই ধরনের প্রকল্প থেকে পাওয়া পেনশনও কিন্তু করযোগ্য। এখন বলা হচ্ছে তহবিলের ৬০ শতাংশের উপর নয়, কর বসবে তাতে পাওয়া সুদে।

কেন্দ্রের যুক্তি, সুদে কর বসানোয় ভুল নেই। কারণ— (১) ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের আমানতে সুদে কর গুনতে হয়। তা হলে ইপিএফ বাদ যাবে কেন? (২) ৬০ শতাংশ টাকার উপরে পাওয়া সুদে কর বসলে, তা খুব বেশি হবে না। (৩) এই কর দিতে হবে মূলত বেসরকারি সংস্থায় অপেক্ষাকৃত বেশি রোজগেরেদের। কারণ, ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল বেতনের কর্মীদের তা গুনতে হবে না। উল্লেখ্য, সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ইপিএফে টাকা রাখা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ জনের মধ্যে তিন কোটিরই মূল বেতন ১৫ হাজারের মধ্যে। (৪) পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিপিএফ) কর বসছে না। বদল হচ্ছে না সরকারি কর্মীদের পিএফেও।

সরকার এ কথা বললেও, বিএমএস-সহ শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ইপিএফে দু’বার কর আদায় করতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ, এখন আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় ইপিএফ, জীবন বিমা, পিপিএফ সব মিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে করছাড় মেলে। ফলে কেউ যদি জীবন বিমা-পিপিএফেই দেড় লক্ষ জমিয়ে ফেলেন, তা হলে ইপিএফে কার্যত করছাড় মেলে না। এখন অবসরের সময় সেই সঞ্চয়ের উপর ফের কর বসাতে চাইছে কেন্দ্র। যখন অনেক বেশি হারে কর গুনতে হবে। এর সরাসরি জবাব না দিলেও অর্থ মন্ত্রকের দাবি, জাতীয় পেনশন প্রকল্পের মতো ইপিএফেও কর্মীদের জমার ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

জেএনইউ-কাণ্ড, ভেমুলার আত্মহত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা নিয়ে বিতর্কের মাঝে বাজেটের পর থেকেই আলোচনার শিরোনামে এসেছে পিএফে কর। এ দিন এনডিএ-র সংসদীয় দলের বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তোলেন শরিক দলের নেতা রামদাস অটবাল। জেটলির আশ্বাস, আখেরে সুদের উপরই কর বসবে। এ নিয়ে বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী, জেটলি ও সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মধ্যে। জেটলি ঘরোয়া ভাবে বিরোধী নেতাদেরও জানান, কর বসবে শুধু সুদেই। কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন বিএমএস নেতৃত্বকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন