জেলে মৃত্যু বন্দির, বিক্ষোভ কয়েদিদের

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

এক বন্দির মৃত্যু ঘিরে বন্দি-বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাড়ানো হল করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে। এই ঘটনায় যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় তার জন্য জেলের ভিতরে বাইরে সশস্ত্র ব্যাটেলিয়ান পুলিশ ছাড়াও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যাবজ্জীবনের আসামি, মৃত নাড়ু মজুমদারের দেহ বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষীদের পাহারায় তার বাড়ি, বদরপুরে পাঠানো হয়েছে। খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে নাড়ু গত ১৮ বছর ধরে করিমগঞ্জ কারাগারে বন্দি।

Advertisement

জেল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কাল রাত ৮টা নাগাদ নাড়ু অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারাগার কর্তৃপক্ষ চিকিৎসককে ডাকেন। তিনি নাড়ুকে পরীক্ষা করে তেমন কোন সমস্যা দেখতে পাননি। রাত ১০টা নাগাদ কারাগারের ভিতরেই মৃত্যু হয় নাড়ুর। তার মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারের ভিতরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অন্য কয়েদিরা মৃতদেহ ঘিরে ধরে। তাদের অভিযোগ, কারাগার কর্তৃপক্ষ ভাল করে তার চিকিৎসা করায়নি। বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তার। কয়েদিদের বক্তব্য ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই গাফিলতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃতদেহ তারা নিয়ে যেতে দেবে না। পরিস্থিতি রাতে এতই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশ সুপার, জেলাশাসককে ছুটে যেতে হয় কারাগারে। পরে প্রায় জোর করেই রাত ১২টা নাগাদ জেল থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হয়। আজ সকালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানোর পর তা তার আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আসলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্তদের ১৪ বছর পর ছাড়ের যে সুযোগ রয়েছে তা এখানকার বন্দিরা পাচ্ছে না। নাড়ু ১৮ বছর সাজা খাটছে। করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে আরো ১৭ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত বন্দির ১৪ বছরের বেশি সাজা খাটা হয়ে গিয়েছে। তারাও ছাড়া পাওয়ার আশায়। তাদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

Advertisement

তবে জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মানে ‘যাবৎ জীবন’। ১৪ বছর হলেই ছাড়া পা এমন কোনও নিয়মই নেই। জেল সুপার হবিবুর রহমান জানান, যাবজ্জীবনের অর্থই হচ্ছে আমৃত্যু। ২০১২ সাল পর্যন্ত কখনও কখনও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে ১৪ বছর হলেই ঢালাও ছাড়ের উপর সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সর্বোচ্চ আদালত জানায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যে ভবিষ্যতে অপরাধ করবে না তা মোটামুটি নিশ্চিত করতে হবে। হাজতে থাকা অবস্থায় বন্দিরা নিজেদের শোধরাতে পেরেছে কিনা তা বিচার করেই তাদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে ছাড়া যেতে পারে। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার একমাত্র ব্যবস্থা নিতে পারবে। ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কোন অপরাধী ১৪ বছর কিংবা ১৬ বছর সাজা লাভ করে বাড়িতে যেতে পারবে এরকম কোন আইন নেই। ফলে বন্দিদের দাবি ঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন