ব্যাগে নড়ছে ‘মৃত’ শিশু! কাঠগড়ায় হাসপাতাল

জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা করে তুমুল ক্ষোভের মুখে বেসরকারি হাসপাতালটি। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

শোকে পাথর হয়েও শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বর্ষা-আশিস। ঘণ্টাখানেক আগেই দিল্লির ম্যাক্স সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল তাঁদের হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে ধরিয়ে দিয়েছিল সদ্যোজাত যমজ সন্তানের দেহ। দেহগুলো শেষ বারের মতো শোয়াতে গিয়ে ফের বুক কেঁপে উঠল বাবা-মার। হাতের প্লাস্টিকের মধ্যেই নড়ে উঠেছে একটি শিশু। সঙ্গে সঙ্গেই ছুট অন্য হাসপাতালে। সেখানে জানা গেল, বেঁচে আছে সে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছে শিশুটি।

Advertisement

জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা করে তুমুল ক্ষোভের মুখে বেসরকারি হাসপাতালটি। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

যমজদের দাদু প্রবীণ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে তাঁর মেয়ে বর্ষার যমজ ছেলেমেয়ে হয়। দুই সন্তানকে মাতৃগর্ভ থেকে বের করার পরেই চিকিৎসকরা জানান, মেয়েটি মৃত অবস্থায় জন্মেছে। ছেলেটির অবস্থাও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাকে জীবনদায়ী ব্যবস্থায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বিপুল খরচ কী ভাবে জোগাড় করা হবে, তা নিয়ে পরিবারের লোকেরা যখন উদ্বিগ্ন, তখন হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, জীবনদায়ী ব্যবস্থায় রাখার দরকার নেই, কারণ ছেলেটিও মারা গেছে। দেহ দু’টি প্লাস্টিকে মুড়ে ধরিয়ে দেওয়া হয় বাবা-মায়ের হাতে।

Advertisement

আরও পড়ুন: যন্ত্রণায় ছটফট করা মেয়েকে কোলে নিয়েই থানায় দৌড়লেন বাবা-মা!

শেষকৃত্যের আয়োজন শুরু হয়। একেবারে শেষ মুহূর্তে হঠাৎই দেখা যায়, প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে একটি বাচ্চা নড়ছে! দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটি বেঁচে আছে। তার চিকিৎসা চলছে।

ম্যাক্স হাসপাতালের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২২ সপ্তাহের অকালপ্রসূত ওই শিশু দু’টির দেহ বাবা-মাকে দেওয়ার সময় তাদের শরীরে জীবনের কোনও লক্ষণ ছিল না। তবে এই ঘটনার তদন্ত হবে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের দাবি, এই ‘বিরল’ ঘটনায় তাঁরাও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যমজদের বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা। তাঁদের যে কোনও সাহায্য করতেও প্রস্তুত।

হাসপাতালের এ সব কথা শুনতেই রাজি নন শিশুর আত্মীয়রা। তাঁরা বিষয়টিকে অবহেলা নয়, অপরাধ হিসেবে দেখার দাবি তুলেছেন। হাসপাতালটি বন্ধ করার দাবিও তুলেছেন। এমনকী হাসপাতালের বিরুদ্ধে ইচ্ছে মতো বিল বাড়ানোর অভিযোগও এনেছেন।

গত মাসেই গুরুগ্রামের ফোর্টিস হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃত এক শিশুর চিকিৎসার জন্য ১৫ দিনে ১৮ লাখ টাকার বিল ধরানো হয়েছিল! তার মধ্যে বিপুল সংখ্যক গ্লাভসের দামও ধরা হয়েছিল। শিশুটির পরিবার পুরো টাকা মিটিয়ে তবেই দেহ হাতে পায়। বিষয়টি নজরে আসার পরেই শুরু হয় তদন্ত। তা এখনও শেষ হয়নি। তার মধ্যেই ফের এমন ঘটনায় ফের বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন