আলগা হোক লাল ফিতের ফাঁস, আবেদন আবাসন নির্মাতাদের

আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে সংসদে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে জোর লড়াই বেঁধেছে মোদী সরকারের। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিলে আসলে স্বার্থ দেখা হয়েছে প্রোমোটারদের। আর সরকারের দাবি, এই বিল আনা হচ্ছে ক্রেতাদের স্বার্থে। আবাসন নির্মাণকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু এই টানাপড়েনের মধ্যে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি, নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবাসন নির্মাণে লাল ফিতের ফাঁস কাটানোও একান্ত জরুরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে সংসদে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে জোর লড়াই বেঁধেছে মোদী সরকারের। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিলে আসলে স্বার্থ দেখা হয়েছে প্রোমোটারদের। আর সরকারের দাবি, এই বিল আনা হচ্ছে ক্রেতাদের স্বার্থে। আবাসন নির্মাণকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু এই টানাপড়েনের মধ্যে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি, নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবাসন নির্মাণে লাল ফিতের ফাঁস কাটানোও একান্ত জরুরি। কারণ, ওই প্রশাসনিক শ্লথতার জন্যই প্রকল্প গড়তে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় তাঁদের।

Advertisement

অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা আবাসনের নকশা মঞ্জুর হতেই বহু বছর লেগে যায়। তাতে প্রকল্প তৈরির খরচ বাড়ে বহুগুণ। আটকে থাকে লগ্নি। ভুগতে হয় নির্মাতাদের। তাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দ্রুত সরকারি ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করাও একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

প্রসূনবাবুর দাবি যে, তিনি নিজে এই লাল ফিতের ফাঁসের ভুক্তভোগী। তাঁর উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি প্রথম আবাসন প্রকল্প ‘কলকাতা ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল সিটি’র জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেতেই পাঁচ বছর সময় লেগেছে। ২০০৩ সালে সালিম, সিপুত্রা গোষ্ঠী এবং প্রসূনবাবুর সংস্থা ইউনিভার্সাল সাকসেস মিলে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ২০০৪ সালে পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু তা মেলে পাঁচ বছর পরে। ২০০৯ সালে। এক দিকে এই লাল ফিতের ফাঁসে কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি, অন্য দিকে নন্দীগ্রামে জমি-আন্দোলনের মুখে পড়ে ২০১০ সালে কলকাতা ওয়েস্ট প্রকল্প থেকে বিদায় নেয় সালিম ও সিপুত্রা গোষ্ঠী। মাত্র ২০ শতাংশ অংশীদারি থাকা সত্ত্বেও তার কাজ শেষ করার দায় কাঁধে তুলে নেন প্রসূনবাবু।

Advertisement

ওই অনাবাসী শিল্পপতির দাবি, ‘‘দেরি হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করছি। দফায় দফায় বাংলো তৈরি করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। শ’খানেক পরিবার ইতিমধ্যেই উপনগরীতে থাকতে শুরু করেছেন। যে ৮০০টি বাংলো বুকিং হয়েছে, তার মধ্যে ৫১০টি তৈরির কাজ শেষ। বাকি ২৯০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৯৫টির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। ৮০টির কাজ শেষ ৬০ শতাংশ। বাকিগুলিরও ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। আমরা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দায়বদ্ধ।’’

মূলত লাল ফিতের ফাঁসের কারণেই তাঁকে ওই প্রকল্পের কাজ লোকসানে শেষ করতে হচ্ছে বলে প্রসূনবাবুর অভিযোগ। তাঁর যুক্তি, এই প্রকল্পের জমি কিনতে ১০০ কোটি টাকা লেগেছিল। তাকে আবাসন গড়ার উপযুক্ত করতে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি। এরপরেও সেই জমি ছাড়পত্রের অভাবে পাঁচ বছর আটকে থাকায় খরচ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় প্রায় ৫৫০ কোটি টাকায়। ক্ষতি হয়েছে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকা।

প্রসূন বলেন, ‘‘বাঙালি বলেই প্রকল্প ছেড়ে যাইনি। ক্রেতাদের মধ্যেও বায়না করার পরে টাকা ফেরত নিয়েছেন, এমন সংখ্যা হাতে গোনা। পালাচ্ছি না। সবাইকেই বাংলো তৈরি করে দেওয়া হবে।’’

কেন্দ্রের প্রস্তাবিত আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিলে বলা হয়েছে, প্রোমোটার ইচ্ছেমাফিক প্ল্যান বা নকশায় রদবদল ঘটাতে পারবেন না। তার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতার অনুমতি নিতে হবে। নকশা, কাজ শেষের সময়সীমা, জমির অনুমোদন আছে ইত্যাদি সম্পর্কে জানাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন