বিরুদ্ধ মত, এ বার বাড়ি গিয়ে হামলা

সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি করা হয়েছে আলাদা গ্রুপ। সদস্যেরা আগাম ঘোষণা করে চড়াও হচ্ছে বিরুদ্ধ মতের মানুষের বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

এত দিন সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালেই চলছিল গালাগালি, হুমকি। এ বার তা পৌঁছে গেল বাড়ির উঠোনে। দেশভক্তির জিগির তুলে বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা— এ ভাবে আগে কখনও এ রাজ্যে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউ।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি করা হয়েছে আলাদা গ্রুপ। সদস্যেরা আগাম ঘোষণা করে চড়াও হচ্ছে বিরুদ্ধ মতের মানুষের বাড়িতে। তারা সরাসরি জানিয়েছে, ‘ ‘কেউ দেশবিরোধী মন্তব্য করছে চোখে পড়লে আমাদের ইনবক্স করুন। আমরা অপরাধীদের খুঁজে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করব, এবং তার ভিডিয়ো এই পেজেই প্রকাশ করব।’’ করা হচ্ছেও তাই। দেশভক্তির প্রমাণ দিতে তাদের সামনে নতজানু হয়ে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। পুরুষ হোন বা মহিলা— এদের হাত থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না কেউই। প্রশাসনের কর্তারা এর পিছনে সংগঠিত রাজনৈতিক চক্রান্তই দেখছেন। কাশ্মীর-কাণ্ডকে সামনে রেখে পরিস্থিতি অশান্ত করাই হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন তাঁরা।

কাশ্মীরে নিহত জওয়ানদের কেন শহিদ বলা যায় না, তা নিয়ে নিজের যুক্তি ফেসবুকের দেওয়ালে লিখেছিলেন বনগাঁর চিত্রদীপ সোম। তার পরেই বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করা হয়। বাড়ি থেকে পালিয়েও রক্ষা পাননি। তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নিহত সেনা জওয়ানদের পাশাপাশি সেখানকার মানুষদেরও কথা ভেবে দেখার অনুরোধ ছিল ছোট্ট একটা পোস্টারে। সেটাই কাল হয়েছে হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রটির। হামলা হয়েছে ওই কিশোরের বাড়িতেও। পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাকেই।

Advertisement

একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া তরুণকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর বাবাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এক মহিলার ভাড়াবাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি— সর্বত্রই এই হামলা চলছে। মনোবিদেরা বলছেন, হামলাকারীদের ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ দেখে বোঝা যাচ্ছে, এর পিছনে পাকা মাথা রয়েছে। সে জন্যই এমন বেপরোয়া ভাব তাদের। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিজেপি, আরএসএস, ভিএইচপি করছে। ফেক খবর ছড়াচ্ছে। পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রচার, ফেক খবর ছড়ানো রুখতে।’’

কলকাতা পুলিশের কর্তাদের দাবি, বিভেদ এবং হুমকি ছড়ানো গ্রুপগুলিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কারা এই সব ছবি, ভিডিয়ো প্রচার করছে, তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘‘যে ভাবে ফেসবুকে বিভেদ ও বিদ্বেষের পক্ষে জনমত তৈরি করা হচ্ছে, তা-ও নজরে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন