হুমকির মধ্যেও সাহায্যের হাত কাশ্মীরিদের

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে এজাজ আহমেদ রাঠৌরের ফোন সকাল থেকেই বাজছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

নজরদারি: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরিদের হেনস্থার প্রতিবাদে হরতালে স্তব্ধ জম্মু-কাশ্মীর। চলছে সেনার টহল। রবিবার জম্মুর রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে এজাজ আহমেদ রাঠৌরের ফোন সকাল থেকেই বাজছে।

Advertisement

কখনও দেহরাদূন, কখনও বেঙ্গালুরু থেকে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ আসছে। পুলওয়ামায় সিআরপি জওয়ানদের ওপর জঙ্গি হামলার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তে কাশ্মীরের ছেলেমেয়েদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। ছাত্রছাত্রী তো বটেই, যারা কাশ্মীরি শাল, শীতের পোশাক নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন, তাঁদেরও।

এজাজ নিজেও দক্ষিণ কাশ্মীরের। এখন জেএনইউ-এ গবেষণা করছেন। এ বার ছাত্র নির্বাচনে ভোটে জিতে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে এজাজ তাই সারা দিন ব্যস্ত।

Advertisement

এজাজের মতোই ব্যস্ত জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট শেহলা রশিদ। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ শনিবারই নানা একাধিক হেল্পলাইন খুলে দিয়েছিল। প্রতিটি জেলা পুলিশের পৃথক হেল্পলাইনও খোলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের আমলা সরিতা চৌহানকে এ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শেহলা সারাদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে যখনই সাহায্য চেয়ে ফোন পেয়েছেন, বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সরিতার কাছে। শেহলা জানিয়েছেন, একেবারে ছোটখাটো অনুরোধও ফেরাননি সরিতা। সদ্য আইএএস-এর চাকরি ছাড়া শাহ ফয়জলও শনিবার থেরে সক্রিয়। যেখানেই বিপদের খবর শুনছেন, জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ-প্রশাসনে নিজের বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছেন। আতঙ্কিত কাশ্মীরিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বছরই কাশ্মীর থেকে অম্বালার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিল ১৮ বছরের এক ছাত্র। অম্বালায় ঘর ভাড়া করে থাকত। শনিবারই তাঁর বাড়ির মালিক সাবধান করে দেয়, ভুলেও বাইরে বের হবে না। সারা সন্ধ্যা আলো নিভিয়ে বসে থেকে আজ সে চণ্ডীগড়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

এজাজ, শেহলা, ফয়জল— সকলেই কাশ্মীরি। নিজের রাজ্যের ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁরা বাড়তি সচেতন হবেনই। কিন্তু শনিবার থেকে দেশের নানা প্রান্তে কাশ্মীরিদের উপর হামলা শুরু হওয়ায়, অনেকেই আজ ফেসবুক-টুইটারের মতো নেট দুনিয়ায় নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বাড়ির দরজা কাশ্মীরিদের জন্য খোলা। দু’একজনের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা তাঁরা করে দেবেন।

কাশ্মীরিদের আশ্রয় দিতে কলকাতারও বহু মানুষ আশ্রয়ের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফেসবুকেও এ নিয়ে নাগাড়ে প্রচার চলছে। বহু মানুষই হুমকি পাওয়া কাশ্মীরিদের নিজের বাড়িতে ‘আত্মীয়ের মতো’ আশ্রয় দিতে চেয়েছেন। ফেসবুকে ‘#আনহেটনাউ’ বলে একটি প্রচারও শুরু হয়েছে। ওই প্রচারে বলা হচ্ছে, পুলওয়ামার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যেখানেই হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধ, প্রতিশোধের ঘটনা দেখবেন, প্রতিবাদ করুন এবং পাল্টা সম্প্রীতির প্রচার করুন। ওই প্রচারের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দাবি, সম্প্রীতি নিয়ে লাগাতার প্রচারেই এই বিদ্বেষ ঠেকানো সম্ভব।

মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দার নিজের হেল্পলাইন খুলে ফেলেছেন। তাঁর বক্তব্য, দিল্লি, পুণে, হায়দরাবাদ, জয়পুর, পটনা, বেঙ্গালুরু, কলকাতা ও চেন্নাইকে নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এজাজ জানিয়েছেন, জম্মুর মতো অনেক জায়গাতেই শিখরা গুরুদ্বার খুলে দিয়েছেন। কেউ বিপদে পড়লে সেখানে চলে যেতে পারে। খবর আসছে নানা রকম। পুলওয়ামার হামলায় আনন্দ প্রকাশের অভিযোগ তুলে জয়পুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৪ জন কাশ্মীরি ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে। একই কারণে হিমাচলের সোলানের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও এক কাশ্মীরি ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে। পরে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

দেহরাদূনের একটি হস্টেলে কাশ্মীরি ছাত্রীদের হেনস্থার খবর পেয়ে শ্রীনগরের মেয়র জুনেইদ আজিম মাট্টু নিজে দেহরাদূনের মেয়র সুনীল গামার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুনীল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলেছে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘‘কাশ্মীর শুধু এক টুকরো জমি নয়। এখানকার মানুষগুলোই আসল। যারা সন্ত্রাসে মদত দিয়ে বিভাজন তৈরি করছে, কাশ্মীরিদের হেনস্থায় বাস্তবে তাদেরই সুবিধা করে দেওয়া হবে।’’ কাশ্মীরিদের হেনস্থার নানা ভুয়ো ভিডিয়ো প্রচার করা হচ্ছে জানিয়ে সিআরপি টুইটে পরামর্শ দিয়েছে, এই সব ছবি কেউ যেন ফরোয়ার্ড না করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন