কেন্দ্রের নীতিই বাড়াচ্ছে দূরত্ব

মোদীর আমলে জম্মু-কাশ্মীরে হিংসা যেমন বেড়েছে, তেমনই বহু কাশ্মীরি তরুণ বন্দুক হাতে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। শীঘ্রই এ নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণের মুখে পড়বে বিজেপি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৭
Share:

সরকারি তথ্যই বলছে, মোদী জমানায় কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও বিক্ষোভ, দুই-ই বেড়েছে। ছবি: এএফপি।

শুধুই পেশিশক্তির আস্ফালন!

Advertisement

মোদী জমানার কাশ্মীর-নীতিকে এ ভাবেই দেখছে উপত্যকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি। আর সেই কারণেই মোদীর আমলে জম্মু-কাশ্মীরে হিংসা যেমন বেড়েছে, তেমনই বহু কাশ্মীরি তরুণ বন্দুক হাতে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। শীঘ্রই এ নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণের মুখে পড়বে বিজেপি।

সরকারি তথ্যই বলছে, মোদী জমানায় কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও বিক্ষোভ, দুই-ই বেড়েছে। অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বেড়েছে কাশ্মীরিদের। স্থানীয় মানুষই নানা খবর দেন গোয়েন্দাদের। অথচ গত কালের ঘটনায় স্পষ্ট, কনভয় যে জঙ্গিদের নিশানা হতে চলেছে, তা জানতই না সিআরপি।

Advertisement

এক দিকে এই অবস্থা। অথচ বিজেপি নেতারা জম্মু-কাশ্মীরের স্বশাসন বিষয়ক সংবিধানের ৩৭০তম অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে গিয়েছেন লাগাতার। মেরুকরণের চেষ্টা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে। বিজেপি-পিডিপি সরকারের পতনের পরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল কনফারেন্স-পিডিপি জোট বেঁধে সরকার গঠনের চেষ্টা করলেও বিধানসভা ভেঙে দিয়েছেন রাজ্যপাল।

কংগ্রেস নেতারাও তাই একান্তে বলছেন, পুলওয়ামার হামলা তথা কাশ্মীরের সার্বিক পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না মোদী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘১৫-২০ বছর আগে মনে হত, কাশ্মীরিদের জঙ্গি হওয়া বন্ধ হল। কিন্তু ২০১৫-তে দেখা গেল, তরুণরা জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়ে, বন্দুক হাতে ছবি দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।’’ ২০১৬-য় নেট-দুনিয়ায় জনপ্রিয় হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পরে তার শেষকৃত্যে ২ লক্ষ লোক হয়েছিল। এর পরেই অশান্তি চরমে ওঠে। কাশ্মীরিদের পাথরের পাল্টা চলতে থাকে বাহিনীর বুলেট ও ছররা। ২০১৭-য় ‘অপারেশন অল আউট’ শুরু হয়ে যায়। আত্মঘাতী বোমারু আদিলের বাবা সংবাদ সংস্থার কাছে দাবি করেছেন, স্কুল থেকে ফেরার পথে বাহিনীর হাতে মার খাওয়ার ক্ষোভেই জঙ্গি হয়েছিল তাঁর ছেলে। সরকারি হিসেবে, ২০১৫-য় জঙ্গি-খাতায় নাম লিখিয়েছিল ৬৬ জন স্থানীয় কাশ্মীরি। ২০১৬-য় ৮৮ জন, ২০১৭-য় ১২৬ জন, ২০১৮-তে ১৮৪ জন।

পুলওয়ামার ঘটনার পরেও জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা রাম মাধব বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলতে হবে।’’ কিন্তু এক পিডিপি নেতার যুক্তি, ‘‘বাহিনীর অভিযানে গত দু’বছরে রেকর্ড সংখ্যক জঙ্গি নিহত হয়েছে। কিন্তু জওয়ান-জঙ্গিদের গুলির মাঝে পড়ে বহু নিরীহ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে। এক জন কাশ্মীরিকে সেনার জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোর ঘটনাও মানুষ ভোলেনি।’’ সরকারি হিসেবে, ২০১৮-তে কাশ্মীরে ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে অর্ধেক সন্ত্রাসবাদী হলেও, বাকিরা নিরীহ কাশ্মীরি।

মোদী সরকারই যদিও ২০১৭-র অক্টোবরে প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান দীনেশ্বর শর্মাকে কাশ্মীরে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পাঠায়। কিন্তু একই সঙ্গে সন্ত্রাসে আর্থিক মদত দেওয়ার অভিযোগে এনআইএ-র অভিযান শুরু হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে। ফলে আলোচনাও যায় থমকে।

তথ্য সহায়তা: সাবির ইবন ইউসুফ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন