প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক আদালতের এমন তোপের মুখে পড়েননি নরেন্দ্র মোদী। গত কাল হরিয়ানায় ডেরা সচ্চা সৌদার ভক্তদের তাণ্ডবে ৩৬ জনের মৃত্যুর পরে আজ মোদীকে কার্যত তাঁর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। বলল, ‘‘উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির নন।’’
ডেরা-প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে গত কাল অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে হরিয়ানা। আঁচ পড়ে লাগোয়া চার রাজ্যেও। আইন-শৃঙ্খলা সামলানোয় ব্যর্থতার প্রধান অভিযোগ অবশ্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের দিকে। যাঁর প্রশাসনকে বিঁধে হাইকোর্টের কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি এস সিংহ শ্যারনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ বলেছে, রাজনৈতিক ফায়দার কথা ভেবেই উত্তেজনা বাড়তে দিয়েছে খট্টর সরকার। এটা ‘রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ’।
বিরোধীদেরও দাবি, ভোটের কথা ভেবে ইচ্ছে করেই ডেরা-র গুন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য। আজ আদালতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সত্যপাল জৈন যুক্তি দেন— আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তখন বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘হরিয়ানা কি ভারতের মধ্যে পড়ে না? পঞ্জাব ও হরিয়ানার সঙ্গে সৎ-ছেলের মতো আচরণ করা হচ্ছে কেন?’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ওই মন্তব্য করেন তাঁরা। যা শুনে অনেকের মনে হয়েছে, গুজরাত দাঙ্গার সময়ে অনেকটা এ ভাবেই মোদীকে রাজধর্ম পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।
আরও পড়ুন:ভূমিশয্যায় রাম রহিম, আপাতত ক্ষান্ত ভক্তরা
গুরমিতের মামলার রায়ের আগে থেকেই বহিরাগতের ভিড় বাড়ছিল পঞ্চকুলায়। উদ্বিগ্ন স্থানীয় নাগরিকেরাই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। তারই শুনানিতে আজ বিচারপতিরা আগাগোড়া ভর্ৎসনা করেছেন রাজ্যকে। বলেছেন, ‘‘আপনারাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিয়েছেন।’’ আজ সকালেই সাসপেন্ড হন পঞ্চকুলা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার। তাঁর নির্দেশে ত্রুটি থাকার জন্যই ১৪৪ ধারা কার্যকর করা যায়নি বলে দাবি রাজ্যের। তা নিয়ে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘এখন আপনারা ছোটখাটো ডিসি-কে হাড়িকাঠে তুলতে চাইছেন। যে রাজনৈতিক প্রভুরা ভুল নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তাঁদের কী হবে?’’ কাল খট্টর বলেছিলেন, দুষ্কৃতীরা ডেরার লোকেদের সঙ্গে মিশে হামলা করেছে। বিচারপতিদের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চাইছেন, ডেরার লোকেরা কিছু করেনি!’’
স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে বিজেপি। মোদী যখন হিমাচল ও হরিয়ানার দায়িত্বে ছিলেন, সেই সময়ে এই রাজ্যগুলিতে সঙ্ঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন খট্টর। জাঠ না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেন মোদী-অমিত শাহ। দলের একাংশের মত, খট্টরকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি থেকে সরানো হোক। না হলে মোদীর উপরেই আঁচ এসে পড়ছে। তবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, এখনই খট্টরকে সরাবেন না তাঁরা। অমিতের সঙ্গে আজ বৈঠক হয় হরিয়ানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অনিল জৈনের। জৈন বলেন, ‘‘খট্টরকে দিল্লিতে ডাকা হয়নি, তাঁকে সরানোরও কোনও প্রস্তাব নেই।’’ সূত্রের বক্তব্য, সোমবার গুরমিতের সাজা ঘোষণার পরে ফের হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল হলে প্রশাসন চালাতে অসুবিধা হবে। হরিয়ানাকে শান্ত রাখার প্রায় সমস্ত পদক্ষেপ আপাতত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে দিল্লির অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতর থেকে। আগামিকাল রেডিওয় মোদীর ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারিত হওয়ার কথা। সেই বক্তৃতায় হরিয়ানা নিয়ে তিনি মুখ খোলেন কি না, সেটাই দেখার।