Q

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ১৮:২০
Share:

মিথ্যা সন্দেহের শিকার নীলোৎপল এবং অভিজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

গুজব রটেছিল কালো গাড়ি নিয়ে ঘুরছে ছেলেধরার দল। তার জেরেই রাতে লাঠি-দা নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই গুজবের বলি হতে হল গুয়াহাটি থেকে কার্বি আংলংয়ের জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া দুই যুবককে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, গত কাল কার্বিং আংলংয়ের ডকমকায় পানিজুরি গ্রামের কাছে একটি জলপ্রপাত দেখতে গিয়েছিলেন গুয়াহাটির দুই অসমিয়া বন্ধু নীলোৎপল দাস ও অভিজিৎ নাথ। পেশায় দু’জনই গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত। নীলোৎপল কর্মসূত্রে গোয়ায় থাকলেও, ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। জলপ্রপাত দেখে ফেরার সময় রাত ৮টা নাগাদ কান্থিলাংসো এলাকায় পানিজুরি গ্রামের কাছে কালো এসইউভি থামিয়ে দোকান থেকে চকলেট কিনতে নামেন নীলোৎপল ও অভিজিৎ। কালো গাড়ি থেকে নামা বহিরাগতদের দেখেই সন্দেহের বশে ঘিরে ধরে জনতা। তাঁরা বারবার নিজেদের পরিচয় দেন। কিন্তু লাভ হয়নি। লাঠি-বাঁশের ঘায়ে, বেধড়ক মারে ঘটনাস্থলেই তাঁদের ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়। জনতা গাড়িটিও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ এসে দেহ দু’টি উদ্ধার করে। এক জন তখনও বেঁচে ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

হারমোনিকা, পারকাসন্স ও কণ্ঠশিল্পী নীলোৎপল সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাজ করতেন। তাঁর বাবা গোপালচন্দ্র দাস বলেন, “ছেলে পাহাড়-জঙ্গল ভালবাসত। হিমাচল যেত বারবার। বাইরে অনেক অনুষ্ঠান করেছে। কার্বি আংলংয়ে যেতে আমি ওকে নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম অচেনা রাস্তায় সবসময় দল বেঁধে যাওয়া ভাল। কিন্তু নিজের রাজ্যে যে এ ভাবে ওকে প্রাণ দিতে হবে তা ভাবা যায়নি।” দুই যুবককে মারধর করার ভিডিয়োও মিলেছে।

Advertisement

আরও খবর
মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি চাই, বিজেপি-কে শর্ত দিচ্ছে শিবসেনা

ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অবিলম্বে এডিজিপি মুকেশ অগ্রবালকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে।

তখনও বেঁচে নীলোৎপল দাস।—নিজস্ব চিত্র।

অভিজিতের বাবা কৃষি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর অজিত নাথ। মা চেঙা কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা ছিলেন। অভিজিৎ একমাত্র ছেলে। অজিতবাবু বলেন, "সকাল বেরিয়ে রাত ১০টার মধ্যে ফিরবে বলে গিয়েছিল ছেলে। কিন্তু ছেলে আর ফিরে এল না। এল ভয়ঙ্কর খবর। যারা ওকে মারলেন, তাঁদের সন্তানকেও যদি এমন করে কেউ মারত কেমন লাগত? ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।"

দেখুন ভিডিয়ো...

পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও জনতা দুজনের চিকিৎসায় বাধা দিয়েছিল।

আরও পড়ুন
থানায় পুলিশকে চড়, সিসিটিভি-তে ধরা পড়ল বিজেপি বিধায়কের কীর্তি

গোটা ঘটনায় পুলিশের অক্ষমতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায় স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনার পরে এলাকায় গিয়ে দুই যুবকের গাড়ি থেকে মেলা সামগ্রীর হিসেব নিচ্ছে, কথা বলছে গ্রামবাসীদের সঙ্গে। হাসাহাসিও চলছে। কিন্তু তার পর ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।

জেলাশাসক মৃদুলকুমার মহন্ত ঘটনা নিয়ে যে মন্তব্য করেন তাতে সমালোচনা আরও বাড়ে। তিনি বলেন, "কান্থিলাংসু খুবই অপরিচিত ও প্রত্যন্ত স্থান। ওই দুই যুবকের পুলিশকে খবর দিয়ে আসা উচিত ছিল। আগে জানলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এত দেরি পর্যন্ত কেন ওরা সেখানে ছিল সেটাও দেখতে হবে। পুলিশ খবর পেয়ে গিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় পেয়েছে দু'জনকে। গাঁওবুড়াদের বলেছি ছেলেধরা গুজব যে ভিত্তিহীন, তা মানুষকে বোঝাতে হবে।"

জনতা গাড়িটিও ভাঙচুর করে।—নিজস্ব চিত্র।

এসপি জি ভি শিবপ্রসাদ শনিবার বিকেলে বলেন, "এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। ওই সময় এলাকায় দুই শতাধিক মানুষ ছিলেন। পুলিশ পৌনে ৯টা নাগাদ খবর পায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ পৌঁছায়। গিয়ে দেখা যায় একজন মৃত। অন্যজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।” এসপি আরও বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য গুজব ও বিদ্বেষ আরও বেশি ছড়াচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমন সব মন্তব্য আসছে- তা থামানো যাচ্ছে না। ওদের সঙ্গে থাকা লম্বা, অদ্ভুতদর্শন বাদ্যযন্ত্র থাকায় মানুষের সন্দেহ আরও বাড়ে। ওই যুবকদের চেহারা, লম্বা চুল দেখেও স্থানীয় মানুষ বহিরাগত বলে ভাবে। আমরা গুজব থামাতে স্থানীয় গ্রামপ্রধানদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।"

ডিজিপি কুলধর শইকিয়া সকলকে সম্প্রীতি বজায় রাখতে বলেন। জানান, পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ দিকে ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই আজ সকালে হোজাইয়ের ডবকায় যমুনামুখ এলাকায় ছেলেধরা আতঙ্কে স্থানীয় মানুষ দিলোয়ার হুসেন ও তপন ভৌমিক নামে দুই যুবককে খুনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশকেও দা নিয়ে আক্রমণ করে জনতা। পুলিশ ওই দুই যুবককে উদ্ধার করে। দুই আক্রমণকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ছেলেধরার আতঙ্ক এখন অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। শিবসাগরে চলছে রাত টহল। শোণিতপুরেও গুজবের জেরে বেধড়ক মার খেয়েছেন এক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ছেলেধরার গুজব ভিত্তিহীন। রাস্তায় ঘোরা ১০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে উদ্ধার করে নিজের আশ্রয়ে রেখেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন