রাফালের দাম নিয়ে ‘এখনই’ আলোচনা করতে চাইল না সুপ্রিম কোর্ট। স্বস্তি এইটুকুই।
কিন্তু উদ্বেগ কাটল না নরেন্দ্র মোদী সরকারের। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা শুনানিতে আজ ঘুরেফিরে এই প্রশ্নটিই উঠল— রাফালের দাম নিয়ে এই ‘মন্ত্রগুপ্তি’ কেন? আর প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ‘এখনই’ এই নিয়ে আলোচনার কথা না-বললেও ভবিষ্যতে যে বলবেন না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, ইউপিএ-র চুক্তির থেকে ১১০০ কোটি টাকা বেশি দামে প্রতিটি যুদ্ধবিমান কিনেছেন নরেন্দ্র মোদী। এর ফলে বন্ধু শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে ফায়দা দেওয়া হয়েছে। আজ মামলাকারীরাও সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তুললেন— ইউপিএ আর এনডিএ জমানার বিমানের দামে যদি কোনও ফারাক না-ই থাকে, তা হলে দাম কেন এত বেশি?
গোপনীয়তার আড়ালে কী লুকোতে চাইছে সরকার?
গত শুনানিতে রাফালের দাম জানানোর নির্দেশ যখন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, সেই সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন এটি ‘গোপন বিষয়’। সুপ্রিম কোর্ট তবু নির্দেশ দেয়— কেন গোপন, সেটাও হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। চাপে পড়ে বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টকে দাম জানিয়েছে সরকার। সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আজ বলেন, ‘‘রাফালের দাম নিয়ে তখনই বিতর্ক হতে পারে, যখন আদালত এ’টিকে জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেবে।’’
আরও পড়ুন: অম্বানী-এরিকের কথা মিলছে না, দেখাল কংগ্রেস
তবুও মামলাকারীরা চেপে ধরেন সরকারকে। তাঁদের যুক্তি, সংসদে দু’বার রাফালের দাম বলা হয়েছে। এখন কীসের গোপনীয়তা?
বেণুগোপাল বলেন, ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তির কিছু বিষয় গোপন। সে’টি ফরাসি সরকারের সম্মতি নিয়েই প্রকাশ্যে আনতে হবে। সংসদেও পুরো দাম বলা হয়নি। সেখানে প্রতি বিমানের দাম ৬৭০ কোটি টাকা বলা হয়েছে। তাতে আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষেবার খরচ ধরা নেই। পুরো অস্ত্রশস্ত্র ও বিমানের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কী থাকবে, সে’টির গোপনীয়তা বজায় না-রাখলে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ফায়দা নেবে। কোনও দেশের নাম না-করেই সরকার পক্ষ বলে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা আরও উন্নত যুদ্ধবিমান আনছে। তাদের কাছে ৪০০টি, আমাদের কাছে ১২৬টি বিমান আছে। তবু সুপ্রিম কোর্টকে সম্মান জানাতেই দাম দেওয়া হয়েছে। বেণুগোপাল তাঁর দফতর থেকেই দাম ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: রাফাল-প্রশ্ন শুনে খেই হারাল কেন্দ্র
রাহুল ক’দিন আগেই অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী, অনিল অম্বানী, দাসো, বহু সাংবাদিক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাবু, ওলাঁদ, মাকরঁ— এঁরা সকলেই দাম জানেন। তবু সরকার বলছে এ’টি ‘জাতীয় গোপন বিষয়’! দাম কেন এত বেড়ে গেল, সেটাই রাহুলের অভিযোগের অন্যতম হাতিয়ার। আদালতকে আজ সরকার জানায়, গত কয়েক বছরে মূল্যবৃদ্ধি, ইউরো-টাকার বিনিময় হার বদলের কারণেই দাম বেড়েছে। কংগ্রেস বলছে— দাম যে গোপন নয়, ফরাসি প্রেসিডেন্টই রাহুলকে জানিয়েছেন। আজ দাম বাড়ার কথা কবুল করেই সরকার নতুন যুক্তি সাজাল।