সৌভাগ্য আসবে কি ঘরে ঘরে, প্রশ্ন একটাই

রবিবারই প্রধানমন্ত্রী নিজে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার পর থেকেই ঢাক পেটাতে নেমে পড়েছেন বিজেপি সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

সূর্য ডুবলেই ইলেকট্রিকের আলো। নরেন্দ্র মোদী চাইছেন, ২০১৯ সালের আগে ‘সৌভাগ্য যোজনা’য় দেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাক। বিরোধীরা বলছেন, বিনিময়ে লোকসভা ভোটে ‘সৌভাগ্য’ চান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, লোকসভা ভোটের আগে সেই প্রকল্প সফল হবে কি?

Advertisement

রবিবারই প্রধানমন্ত্রী নিজে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার পর থেকেই ঢাক পেটাতে নেমে পড়েছেন বিজেপি সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা। রাহুল গাঁধী একে কটাক্ষ করেছেন ‘এক অওর ঝুট’ বলে। তার মোকাবিলা করতে সরকারকে আজ বলতে হয়েছে, সরকারি অফিস এবং নিয়মরক্ষার ১০ শতাংশ বাড়ির হিসাব দেখিয়ে নয়, গ্রামে ৮২ শতাংশ বিদ্যুদয়নের ভিত্তিতেই এই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহের আজ দাবি, ‘‘সব গ্রামের পর এবার সব বাড়ি। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।’’

কিন্তু সরকারি হিসেবই তো বলছে, এখনও সারা দেশে গ্রামের ৩ কোটি ১৩ লক্ষের বেশি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছনো বাকি। দেশে ১৭ কোটি ৯৯ লক্ষের বেশি গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ১৭ শতাংশ ঘরেই এখনও বিদ্যুৎ নেই। পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ১৩ হাজার পরিবারে এখনও বিদ্যুৎ যায়নি।

Advertisement

ডিসেম্বরের মধ্যে এত বাড়িতে কি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব? সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, তা করতে হলে বিদ্যুদয়নের কাজ প্রায় ছয় গুণ বাড়াতে হবে। এখন প্রতি মাসে নতুন প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ বছরের বাকি ৮ মাসে ৩ কোটি ১৩ লক্ষের বেশি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছতে হলে, প্রতি মাসে ৩৯ লক্ষের বেশি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু এখন যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছতে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যাবে।

মোদী জমানার চার বছরে বারবার বিদ্যুদয়ন প্রকল্পর রূপ বদলেছে। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ যোজনার নাম পাল্টে প্রথমে হয়েছিল দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা। তার পর সেপ্টেম্বরে নতুন সাজে ‘সৌভাগ্য’ বা ‘প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা’ চালু করেছেন নরেন্দ্র মোদী। যে প্রকল্পের প্রথম চার মাসে প্রায় ২৬ লক্ষ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।

শুধু প্রকল্পের নামই নয়, বিদ্যুদয়নের লক্ষ্যমাত্রাও পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারি সূত্র বলছে, গত বছর অগস্টে বিদ্যুৎ মন্ত্রকই সংসদে জানিয়েছিল, ২০২২ সালের ১৫ অগস্টের মধ্যে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। তারপরেই সেপ্টেম্বরে মোদী ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্প চালু করে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। প্রশ্ন তা রূপায়ণ নিয়েই।

তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্র বলছে, এখানে একটি ফাঁক রয়েছে। ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্প অনুযায়ী, সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বিভিন্ন রাজ্য সরকারের। তা হলে কি লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ্য পূরণ না হলে রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপাবেন মোদী? কার ভাগ্যে কী যে আছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন