মণিপুরের নাগা এলাকার গ্রামগুলি কখনও মণিপুর বা মেইতেইদের সম্পত্তি ছিল না— মণিপুরে এসে এনএসসিএন আই-এমের দাবির সমর্থনে এমনই কথা বললেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং। তাঁর কথায়, ‘‘যে গ্রামগুলি কখনও মেইতেইদের ছিলই তা, সে সবের অধিকার নাগারা দাবি করলে তাতে মণিপুর সরকারের আপত্তি কেন?’’
এনএসসিএন আই-এম ও ভারত সরকারের শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে উত্তর-পূর্বের নাগা অধ্যূষিত এলাকাগুলি বৃহত্তর নাগালিমের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে আই-এম নেতৃত্ব। তা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে অসম, মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ। কেন্দ্র থেকেও বার বার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, নাগা চুক্তির ফলে পড়শি রাজ্যগুলির সীমানায় কোপ পড়বে না। কিন্তু আই-এম ও নাগাল্যান্ড সরকার সেই অধিকারের দাবি ছাড়তে নারাজ। মণিপুরের নাগা অধ্যূষিত উখরুল, সেনাপতি বা তামেংলংকে নিজেদের এলাকা বলেই দাবি করে টাংখুল নাগারা।
সেনাপতি জেলায় নাগা গ্রামসভাগুলির প্রথম সমাবেশে অংশ নিয়ে জেলিয়াং বলেন, ‘‘নাগা শান্তি প্রক্রিয়া কারও জমি কাড়বে না। কিন্তু মণিপুর সরকার কেন এ নিয়ে ক্ষুব্ধ? নাগা অধ্যূষিত গ্রামগুলি বরাবরই নাগাল্যান্ডের অংশ ছিল। ইংরাজ আমলে ব্রিটিশদের ঐতিহাসিক ভুলের মাসুল দিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।’’ সমাবেশে অংশ নেন নাগাল্যান্ডের শিক্ষামন্ত্রী টোকেহো ইয়েপথিমি, সে রাজ্যের রাজ্যসভা সাংসদ কে জি কেনিয়ে, মণিপুরে থাকা ৭৫০টি নাগা গ্রামের গ্রামপ্রধান, গ্রামসভার চেয়ারম্যান, নাগা সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। জেলিয়াংয়ের মতে, মণিপুরে থাকা নাগাদের একজোট হওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা। নাগা সমস্যা এ ভাবে জিইয়ে রাখা ঠিক নয়। মণিপুরের নাগা গ্রামগুলি প্রাক ইংরাজ আমলে স্বাধীন ও স্বশাসিত ছিল।
জেলিয়াং খাপলাং বাহিনীকে যুদ্ধ ছেড়ে শান্তির রাস্তায় ফেরার আহ্বান জানান। ভারত সরকারের পাশাপাশি খাপলাং বাহিনী এখন মায়ানমার সরকারের সঙ্গেও সংঘর্ষবিরতিতে নেই। জেলিয়াং প্রস্তাব দেন— খাপলাংরা শান্তি চাইলে, তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষবিরতির ব্যবস্থা করবেন।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ জেলিয়াংয়ের কথার প্রতিবাদ করে জানান, মণিপুরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জেলিয়াংয়ের নেই। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মণিপুরে এসে মণিপুরি ও নাগাদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। ইবোবি বলেন, ‘‘মণিপুর বা উত্তর-পূর্বের ইতিহাস জেলিয়াং ঠিকমতো জানেন না। মণিপুর বরাবরই স্বাধীন রাজ্য ছিল। ইংরেজ আমলে তা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। আর নাগাল্যান্ড ছিল অসমের অংশ। জেলিয়াং বরং অন্য রাজ্যে ঝামেলা না পাকিয়ে নিজের রাজ্যে মন দিন।’’
জেলিয়াং এনডিএ শরিক হলেও রাজ্য বিজেপি জেলিয়াংয়ের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। বিজেপির প্রবীণ নেতা ওক্রাম জয় সিংহ, এন বীরেণ সিংহরা বলেন— নাগাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জেলিয়াং এলে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মণিপুরে এসে সংঘাতে উস্কানি দিলে বা রাজ্যে অংশ ছিনিয়ে নিতে চাইলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
মণিপুরে ভূমিপুত্রদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ভূমি আইন, ব্যবসা সংক্রান্ত আইন ও মণিপুর পিপলস বিলে তিনটি সংশোধনী আনা হচ্ছে। নতুন সংশোধনীগুলির মাধ্যমে ভূমিপুত্র হিসেবে মেইতেইদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা ও ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিতে রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সেই সংশোধনীর বিরোধিতা করে জেলিয়াং বলেন, ‘‘ওই সংশোধনীগুলি উপজাতি বিরোধী।’’ আসন্ন নির্বাচনে নাগা এলাকায় এনপিএফ প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল, নাগা হো হো সহ-সভাপতি, নাগা মহিলা সংগঠনের সভাপতিরাও নাগাদের অধিকার আদায়ে একজোট হওয়ার ডাক দেন।