বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে স্কুলে স্কুলে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা করবে তাঁর স্মৃতিরক্ষা সমিতি।
আজ উল্লাসকরের ১৩১-তম জন্মদিন পালনে শিলচরে ওই বিপ্লবীর মূর্তির পাদদেশে নানা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ক্যুইজের কথা ঘোষণা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুখময় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বিপ্লবী উল্লাসকরের জীবনের শেষ ১৪ বছর শিলচরে কেটেছিল। এখানে তাঁর ব্রোঞ্জনির্মিত আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। অথচ নতুন প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। এ বার স্কুলছাত্রদের তাঁর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তোলা হবে। সেজন্যই ক্যুইজের পরিকল্পনা।’’
এ দিন সকালে বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন তাপসশঙ্কর দত্ত, শ্যামলকান্তি দেব, সন্দীপন এন্দ, দেবব্রত দাস, পরিতোষ দে, প্রবীর রায়চৌধুরী। দীননাথ নবকিশোর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও দল বেঁধে এসে উল্লাসকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সন্ধ্যায় মূর্তির পাদদেশে ১৩১টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
সমিতির যুগ্ম সম্পাদক প্রবীরকুমার রায়চৌধুরীর আক্ষেপ, উল্লাসকর দত্তকে নিয়ে লেখালেখি বড় কম। বীরেশ মিশ্র একটি বই লিখেছিলেন। কিন্তু বইটি ছাপানোর কথা বলে কে বা কারা তাঁর কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি নিয়ে যান। এখন বীরেশবাবু নেই, বইটিও ছাপা হয়নি। পাণ্ডুলিপি কোথায় আছে, তার হদিশ মেলেনি। পরে সুখময় ভট্টাচার্য “সাগ্নিক উল্লাস” নামে একটি বই লেখেন। সমিতির আশা, ক্যুইজের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহী করে তোলা গেলে পরবর্তী সময়ে এক-দু’জন তাঁর সম্পর্কে বিস্তৃত জানতে চাইবেন।
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বক্তারা জানান, কলেজে পড়ার সময় বিপিনচন্দ্র পালের বক্তৃতা শুনে উল্লাসকরের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে আন্দোলনের সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক রাসেল এক দিন ক্লাসের মধ্যে এ নিয়ে কটু মন্তব্য করেন। উল্লাসকর তাকে চটিপেটা করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তখন থেকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোকাবিলায় বিস্ফোরক জিনিস নির্মাণের পরিকল্পনা করতে থাকেন। বিভিন্ন বই ঘেঁটে তিনি বোমা তৈরি করেন। সেটিই বাংলার প্রথম বোমা। ক্ষুদিরাম বসু যে বোমা নিয়ে ধরা পড়ে ফাঁসিতে প্রাণ দেন, সেটিও ছিল উল্লাসকরের তৈরি। ১৯০৮ সালের ২ মে উল্লাসকরকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। আলিপুর আদালতের বিচারে তাঁর ফাঁসির রায় হয়। আপিল মামলায় তাঁর দ্বীপান্তর হয়। আন্দামানে নিয়ে গিয়ে ব্রিটিশ তাঁর উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। এতে জেলেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১৯২০ সালে তাঁর নির্বাসনের মেয়াদ শেষ হয়। এ বার কোথায় থাকবেন, কী করবেন, এ বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। প্রায়ই মানসিক যন্ত্রণায় নিজের মনেই কথা বলতেন। ব্রাহ্মসমাজ তখন এগিয়ে আসে। এরই মধ্যে বিপিনবাবুর বিধবা কন্যা লীলা পালের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়।
লীলাদেবী তখন পঙ্গু। হাত দু’টি নড়াচড়া করে বটে, কিন্তু সেই হাতে কিছু করতে পারেন না। জেলে যাওয়ার আগে লীলাদেবীকেই উল্লাসের বিয়ে করার কথা ছিল। স্মৃতি জেগে উঠল। ৬৩ বছর বয়সে তিনি ৫৮ বছরের পঙ্গু লীলাদেবীকে বিয়ে করলেন। রামমোহন লাইব্রেরির বারান্দায় সংসার শুরু হয়।
তিন বছর কলকাতায় কাটিয়ে ১৯৫১ সালে উল্লাসকর লীলাদেবীকে নিয়ে শিলচর আসেন। এখানেই তাঁরা ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ১৯৬২ সালে লীলাদেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার তিন বছর পর উল্লাসকর দত্ত।